অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগাতে গত ১০ মাসের মধ্যে এই প্রথম ভিত্তি সুদহার কমিয়েছে চীন। আজ মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে অর্থনীতিকে চাঙা করতে আরও প্রণোদনা আসছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
করোনাভাইরাসের কারণে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত দফায় দফায় লকডাউন দিয়েছিল চীন। তবে শেষ পর্যন্ত গণবিক্ষোভের মুখে তারা বিধিনিষেধ শিথিল করতে বাধ্য হয়। এরপর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হলেও পরে আবার গতি হারিয়ে ফেলে।
এ প্রেক্ষাপটে চীন এক বছর মেয়াদি লোন প্রাইম রেট (এলপিআর) ১০ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ করেছে। একই সঙ্গে তারা পাঁচ বছর মেয়াদি এলপিআরও ১০ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়েছে। এটি ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি নীতি সুদহার হ্রাস করে। তার আলোকে এবার এলপিআর কমানো হলো।
মধ্যমেয়াদি নীতি সুদহার মূলত এলপিআরের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও বোঝেন, মধ্যমেয়াদি নীতি সুদহারে পরিবর্তন আসার অর্থ হলো, ব্যাংকিং খাতের অন্যান্য সুদহারেও পরিবর্তন আসা।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স প্রিটচার্ড রয়টার্সকে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের কারণে নতুন ঋণের সুদহার কমবে, সেই সঙ্গে বিদ্যমান ঋণের সুদহারও কমবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কিছুটা গতি আসবে, তবে ঋণের চাহিদা কম থাকার কারণে আমরা মনে করি না যে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেকটা বেড়ে যাবে।’
এদিকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কীভাবে গতি আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সরকারের মন্ত্রিসভা গত শুক্রবার বৈঠকে বসে। বৈঠকে তারা আরও নীতিসহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
বিওএফও গ্লোবাল রিসার্চের বিশ্লেষকদের মতে, ‘পৃথকভাবে হয়তো আরও কিছু নীতিসহায়তা দেওয়া হবে, যার মধ্যে আছে এলপিআর হ্রাস, বছরের শেষ নাগাদ যা ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমতে পারে। কিন্তু বিষয়টা কেবল এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর সঙ্গে আরও যা যা থাকতে পারে, সেগুলো হলো বন্ধকি ঋণের সুদহার হ্রাস ও ঋণের কিস্তির পুনর্বিন্যাস। মানুষের ভোগব্যয় বৃদ্ধি সহায়ক নীতিও প্রণয়ন করা হতে পারে।’
গবেষণা সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘মুদ্রানীতিতে এই সামান্য শিথিলতার কারণে প্রবৃদ্ধির হার একদম দ্রুতগতিতে পড়ে যাবে না, কিন্তু এ কারণে যে নিকট ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির হার অনেকটা বেড়ে যাবে, তেমনটাও হবে না।’ সেই সঙ্গে চলতি বছরের জন্য চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ করেছে তারা।
মে মাসে চীনের উৎপাদন কার্যক্রম গতি হারানোর কারণে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংক চীনের প্রবৃদ্ধির হার হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে।
চীনা ব্যাংকগুলো সাধারণত তাদের সেরা গ্রাহকদের এলপিআরের হারে ঋণ দেয়। ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এই সুদহার নির্ধারণ করে এবং প্রতি মাসেই তারা চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এই সুদহারের প্রস্তাব পেশ করে।
চীনের অধিকাংশ নতুন ও বকেয়া ঋণের সুদহার এক বছর মেয়াদি এলপিআরের ওপর নির্ভর করে। পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণের সুদহার বন্ধকি ঋণের সুদহারের ওপর নির্ভরশীল। এর আগে ২০২২ সালের আগস্টে চীন অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগাতে এই উভয় প্রকৃতির এলপিআর হ্রাস করে।
অর্থনীতির গতি বৃদ্ধিতে সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বড় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়েছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত করে ব্যয় করতে উৎসাহিত করা।
দেশটির ছয়টি রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ডিমান্ড ডিপোজিট বা চাহিদামাত্র উত্তোলন সুবিধাসম্পন্ন হিসাবের সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ করেছে। নির্দিষ্ট মেয়াদের আমানতের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।
অর্থনীতির সূত্রানুসারে, মানুষকে বেশি ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে আমানতের সুদহার হ্রাস। প্রত্যাশা করা হয়, মানুষ ব্যাংকে অর্থ জমা রেখে বেশি সুদ না পেলে তা উঠিয়ে ব্যয় করবে এবং এতে অর্থনীতি চাঙা হবে।