বিশ্বের মোট ১৩৪টি দেশ এখন ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার বিষয়ে কাজ করছে। এই মুদ্রা হবে এসব দেশের বর্তমান মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ। দেশগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতির ৯৮ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এই মুদ্রা এখন পরিচিতি পাচ্ছে সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সিজ (সিবিডিসি) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা নামে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এসব দেশের অর্ধেক ডিজিটাল মুদ্রার চালুর বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এদের মধ্যে চীন, বাহামা ও নাইজেরিয়া সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিল মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেছে যে জি-২০-এর সব কটি দেশ সিবিডিসি চালুর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৪টি দেশ এখন পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছে। এক বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৩৬। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্তৃপক্ষ চাইছে, কাগুজে মুদ্রার ব্যবহার কমে যাওয়া ও বিটকয়েনের মতো মুদ্রার পক্ষ থেকে আসা হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের জস লিপস্কি এবং অনন্যা কুমার বলছেন যে চলতি বছরে ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে অন্যতম বড় অগ্রগতি হলো বাহামা, জ্যামাইকা ও নাইজেরিয়ায় এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়া। অনেক দেশ ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করলেও শুধু এই তিন দেশে এখন পর্যন্ত তা পুরোদমে চালু হয়েছে।
ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা–নিরীক্ষা হচ্ছে চীনে। দেশটির ডিজিটাল মুদ্রা ই–সিএনওয়াই বা ইলেকট্রনিক ইউয়ানের লেনদেন চার গুণ বেড়ে ৭ লাখ ইউয়ানে পৌঁছেছে, যা ৯৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
জস লিপস্কি বলেন, ‘এমন একটি বয়ান আছে, সিবিডিসি চালু করেছে, এমন দেশগুলোতে এর ব্যবহার হয় কম অথবা একেবারে হচ্ছে না। কিন্তু গত কয়েক মাসে আমরা দেখেছি যে এর ব্যবহার সত্যিই বেড়েছে। আমার ভবিষ্যদ্বাণী হলো, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন থেকে এক বছরের মধ্যে ডিজিটাল মুদ্রা পুরোদমে চালু করবে।’
অন্যদের মধ্যে যারা এগিয়ে রয়েছে, তাদের একটি হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা কয়েক বছরের জন্য একটি পরীক্ষামূলক ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছে। ডিজিটাল মুদ্রা চালু করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বেশি ভুগছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারাও এখন ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সিবিডিসি নিয়ে একটি আন্তসীমান্ত প্রকল্প চালু করেছে।
ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার বিষয়ে বিশ্বের প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র বেশ পিছিয়ে আছে। এর কারণ হিসেবে জস লিপস্কি বলছেন যে সিবিডিসির গোপনীয়তা ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য উদ্বেগ নিয়ে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি সরব, যুক্তরাষ্ট্র তার একটি।
মে মাসে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল পাস হয়েছে, যার মাধ্যমে সরাসরি ‘খুচরা’ সিবিডিসি চালুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই খুচরা সিবিডিসি ব্যবহার করে থাকে। সিনেট এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের প্রচারণায় বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ও পরবর্তীতে জি–৭–এর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর শুধু ব্যাংকব্যবস্থা ব্যবহার করে বাস্তবায়ন করা সিবিডিসি কর্মকাণ্ড দ্বিগুণ হয়েছে। এই সংখ্যা ১৩। এদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে চীন, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং ও সৌদি আরবকে সংযুক্ত করে বাস্তবায়ন করা সিবিডিসি প্রকল্প।
এই প্রকল্প পরিচিত এমব্রিজ নামে। চলতি বছর এতে আরও দেশ যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাশিয়া এদের সঙ্গে যোগ দেবে, এমন সম্ভাবনা কম। তবে দেশটি যে ডিজিটাল রুবল চালু করেছে, তা এখন মস্কোর মেট্রোব্যবস্থা ও কিছু পেট্রলপাম্পে ব্যবহার করা যাচ্ছে। ইরানও ডিজিটাল রিয়াল চালু করার বিষয়ে কাজ করছে।
জস লিপস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ফলাফল যা–ই আসুক না কেন, মোদ্দাকথা হলো, ফেডারেল রিজার্ভ অনেক বছর পিছিয়ে আছে।’