রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে যে আয় হবে, সেই অর্থ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রথম সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ লক্ষ্যে তারা আইন প্রণয়ন করেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র পশ্চিমা শক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়। রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোয় রাশিয়ার যে সম্পদ ছিল, তা জব্দ করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জি সেভেনভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৩২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার জব্দ করে। এরপর এই অর্থ কীভাবে ব্যবহার করা হবে, দুই বছর ধরে তা নিয়ে অনেক তর্ক–বিতর্ক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই অর্থ ব্যবহারের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য শুরু থেকেই রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পক্ষে ছিল। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তৃপক্ষ মনে করছিল যে এটা আইনগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
রাশিয়ার যত সম্পদ জব্দ হয়েছে, তার বড় অংশ আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। এ বড় অংশ আবার বেলজিয়ামের ক্লিয়ারিং হাউস ইউরো ক্লিয়ারের হাতে জব্দ আছে। এখন বেলজিয়ামের হাতে যেসব সম্পদ আছে, তার ওপর ধার্য করা কর ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহারের জন্য আলাদা করা যাবে। এই তহবিল ব্যবস্থাপনা করে বেলজিয়াম সরকার।
তবে গতকাল সোমবার যে আইন পাস হয়েছে, তার বদৌলতে ইউরো ক্লিয়ারের মতো সেন্ট্রাল সিকিউরিটি ডিপোজিটরিগুলো রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে পাওয়া নিট মুনাফা ব্যবহার করতে পারবে না এবং সেই সম্পদ থেকে পাওয়া রাজস্ব আলাদা করে রাখতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদ জব্দ আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ায় আগামী ৪ বছরে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ১ হাজার ৬১৭ কোটি ডলার বরাদ্দ করা যাবে। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে আরও ৫ হাজার ৩৮৯ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রাশিয়ার সম্পদ এমন আরও বাস্তবসম্মতভাবে ব্যবহার করা হবে বলে আমরা আশা করি। তবে এসব পদক্ষেপ দ্রুততার সঙ্গে নিতে হবে।’
রয়টার্স এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। যদিও এর আগে মস্কো বলেছে, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ব্যবহারের চেষ্টা আইনগতভাবে অবৈধ এবং মস্কো বিনা চ্যালেঞ্জে তা ছেড়ে দেবে না। ফলে দীর্ঘদিন এ–সংক্রান্ত মামলা চলতে পারে।