সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের মালিক কোম্পানি ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ রীতিমতো ধুঁকছে।
ব্যবসায়িক নথিপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় গত মাসে দোষী সাব্যস্ত হন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই মামলার ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সেই ঘটনার পর ট্রুথ সোশ্যালের বাজারমূল্য প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছিল। গত শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারমূল্য আরও ৫ শতাংশ কমেছে। ফলে সব মিলিয়ে গত তিন সপ্তাহে ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারমূল্য ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে ওই কোম্পানিতে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেয়ারের মূল্য প্রায় তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার কমে গেছে। তিনি এই কোম্পানির চেয়ারম্যান।
কয়েক সপ্তাহ ধরে শেয়ারহোল্ডাররা ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করছেন। সম্প্রতি ট্রাম্পের এক ঘোষণায় এই শেয়ার বিক্রি আরও বেড়ে যায়। সেটা হলো, কয়েক দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন এক অনুমোদন তিনি পেয়েছেন, যার কারণে শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ মূল্য কমে যেতে পারে।
এদিকে ক্ষতি শুধু শেয়ারমূল্যের ক্ষেত্রেই নয়, বরং কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ট্রাম্প মিডিয়া আরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক জে রিটার বলেছেন, ট্রাম্প মিডিয়া কোম্পানির শেয়ার অতি মূল্যায়িত।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের দাম এত কমে যাওয়ার পরও ট্রাম্প মিডিয়ার বাজার মূলধন এখনো শতকোটি ডলারের ওপরে, যদিও এই কোম্পানি এখনো তেমন একটা রাজস্ব আয় করে না।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে ট্রাম্প মিডিয়া মাত্র ৭ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ ডলার রাজস্ব আয়ের তথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির রাজস্ব আয় ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডলারের নিচে থাকল। শুধু তা–ই নয়, জনপ্রিয়তার দিক থেকেও ট্রুথ সোশ্যাল এখনো বলার মতো কিছু নয়। ফেসবুক, এক্স, রেডিট ও ইনস্টাগ্রামের থ্রেডসের সামনে এটি নগণ্য।
রেনেসাঁ ক্যাপিটালের আইপিও–বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কৌশলবিদ ম্যাথু কেনেডি বলেন, ‘এই কোম্পানি এখনো বিকশিত হচ্ছে, যদিও এর বাজারমূল্য কয়েক বিলিয়ন বা কয়েক শ কোটি ডলার।’
অনেক বাজার বিশ্লেষক সে কারণে ট্রাম্প মিডিয়াকে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির কাতারে না ফেলে গুজবভিত্তিক কোম্পানির কাতারে ফেলতে চান। অর্থাৎ এমন কোম্পানি যে কোম্পানির শেয়ারের দাম মৌলভিত্তি নয়, বরং গুজবের ওপর নির্ভর করে।
জুন মাস এমনিতেই ট্রুথ সোশ্যালের জন্য ভালো যাচ্ছে না। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কোম্পানির নিবন্ধন বিবৃতি অনুমোদন করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের অতিরিক্ত শেয়ার কেনার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ অনুমোদন প্রত্যাশিত ছিল; এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিটি আরও ২৫ কোটি ডলার তুলতে পারে। এই অর্থ দিয়ে ট্রুথ সোশ্যাল নিজেদের বিজ্ঞাপনী প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন বা ছোট কোনো কোম্পানি কিনে নিতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প মিডিয়া ২১ কোটি ৫০ লাখ নতুন শেয়ার ছাড়তে পারে। তবে এতে বিদ্যমান শেয়ারের মূল্যে প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রুথ সোশ্যালের প্রধান নির্বাহী ডেভিন নানেস অবশ্য এই মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক। নিবন্ধন অনুমোদন পাওয়ার পর কোম্পানিটি এখন টিভি স্ট্রিমিংয়ে যেতে চায়। এ ছাড়া নিজেদের প্ল্যাটফর্মের উন্নতি ঘটানোর সঙ্গে অন্য কোম্পানি কিনে নেওয়া বা কারও সঙ্গে এটি একীভূতও হতে পারবে।
শেয়ারের দাম নির্ভর করে বাজারের সেই স্টকের চাহিদা ও জোগানের ওপর। এ নীতি সব স্টকের বেলায় প্রযোজ্য; কিন্তু জনপ্রিয় স্টকের বেলায় এ কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য এ কারণে যে এসব স্টকের মূল্য অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রকৃত মূল্য প্রতিফলন করে না।
ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপুল পরিমাণ শেয়ার আছে। এই কোম্পানির ৬৫ শতাংশ বা ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৫০০ শেয়ারের মালিক তিনি। কোম্পানির শেয়ারমূল্য নির্দিষ্ট সীমার ওপরে থাকার কারণে গত এপ্রিল মাসে যে বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়, তার বদৌলতে ট্রাম্পের বিনিয়োগ মূল্য আরও ফুলেফেঁপে ওঠে।
এ মুহূর্তে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পের শেয়ারের মূল্য ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৩১০ কোটি ডলার, যদিও ৩০ মে তাঁর শেয়ারের মূল্য ছিল ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারের বেশি।