সংকট মোকাবিলায় বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ শ্রীলঙ্কার

অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ শ্রীলঙ্কা এবার ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা আবার শুরু করতে যাচ্ছে। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, অর্থনীতিকে আবার দাঁড় করাতে এর বিকল্প নেই। তবে এ আলোচনা নতুন নয়। চার বছর আগেই আলোচনা শুরু করেছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপদেশ।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড সরকারের একটি প্রতিনিধিদল আগামী সোমবার বাণিজ্য আলোচনা করতে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে। এটি থাইল্যান্ডের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনা। এর আগে ২০১৮ সালে তারা সর্বশেষ আলোচনা করেছিল।

অন্যদিকে বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন ও ভারতের সঙ্গে আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আলোচনায় বসবে শ্রীলঙ্কা। দুটি দেশের সঙ্গেই ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি ডলার।

শ্রীলঙ্কার এফটিএ আলোচনার প্রধান সমন্বয়কারী কে জে ভিরাসংহে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছি। দেশের এ সংকটের সময় এটা জরুরি। আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রথম ভাগের মধ্যে এসব চুক্তি সম্পাদন করা।’

ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার এফটিএ আগেই হয়েছে। এবার তারা চাচ্ছে ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান এফটিএকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত চুক্তিতে রূপান্তরিত করতে। আগেও তারা এ আলোচনা করেছে, কিন্তু ২০১৮ সালে এ আলোচনাও বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিদ্যমান এই চুক্তি মূলত বাণিজ্য নিয়ে। এবার তারা এর সঙ্গে সেবা ও বিনিয়োগ খাত যুক্ত করতে চাচ্ছে।

অন্যদিকে চীনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্য আলোচনা বেশ কয়েক বছর আগে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ আলোচনাও ২০১৮ সালে স্থগিত হয়ে যায়। তখন মূলত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির উদারীকরণ নিয়ে মতানৈক্য হওয়ায় আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস, ২০২২ সালে দেশটির অর্থনীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগ থেকে দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে বলেই মনে করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত এক দশকে বিপুল ঋণ নিয়ে অনেক অবকাঠামো প্রকল্প করেছে শ্রীলঙ্কা, যার অনেকগুলোই কাজে আসেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৯৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৫১ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারই বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া।

এতে জাপান, চীন, ভারত, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে নেওয়া দ্বিপক্ষীয় ঋণের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে নেওয়া সার্বভৌম ঋণ রয়েছে। এসব প্রকল্প কাজে না আসায় শ্রীলঙ্কা ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এরপর ২০২০ সালে করোনা মহামারির জেরে বিপর্যয় আরও মারাত্মক হয়েছে।