চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডগুলো। সেই সঙ্গে চীন সরকার ইন্টারনেটে বিলাসব্যসন প্রদর্শনের বিরুদ্ধে যেভাবে খড়্গহস্ত হয়েছে, সেটাও তাদের ব্যবসায় প্রভাব ফেলছে।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এশিয়া অঞ্চলে ফ্রান্সের বিলাসবহুল পণ্যের ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের ব্যবসা ১৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে তা কমেছিল ৬ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যবসা আরও খারাপ হয়েছে। এশিয়ার এই হিসাবের মধ্যে চীন অন্তর্ভুক্ত, জাপান নয়।
শুধু এলভিএমএইচ নয়, চীনের অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে বিশ্বের অন্যান্য বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের ব্যবসাও সেখানে মার খাচ্ছে বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়; সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে যে তারকা বা প্রভাব বিস্তারকারীরা অনলাইনে বিলাসবহুল পণ্য প্রদর্শন করেন, তাঁদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে চীন সরকার। এসব কারণে চীনে ব্যবসা করতে পারছে না এই কোম্পানিগুলো।
চীনে ব্যবসা কমে যাওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে এলভিএমএইচের সামগ্রিক রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এলভিএমএইচের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে ১ শতাংশে নেমেছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নল্ট সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বছরের প্রথম ভাগে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, তা এলভিএমএইচের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বার্নার্ড আর্নল্ট আরও বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোম্পানি সতর্ক অবস্থানে আছে ঠিক; সেই সঙ্গে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শুরু করেছে এলভিএমএইচ।
এলভিএমএইচের মতো বিলাসবহুল পণ্যের ব্র্যান্ড যেমন লুই ভুইতোঁ ও ডিওর অ্যান্ড টিফানির মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের শেয়ারের দাম গত ১ বছরে ২০ শতাংশের বেশি কমেছে।
অন্যদিকে চীনের বাজারে সুইস ঘড়ির ব্র্যান্ড ব্ল্যাঙ্কপেইন, লনজিন ও ওমেগার মূল কোম্পানি সোয়াচ গ্রুপের বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া চীন, হংকং ও ম্যাকাওয়ে রিশমন্টের বেচাকেনা ২৭ শতাংশ কমেছে।
জার্মানির বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড হুগো বসও মনে করছে, চলতি বছর সামগ্রিকভাবে তাদের বেচাকেনা কমবে। মূলত চীন ও যুক্তরাজ্যের বাজারে বেচাকেনা কমে যাবে, এই ধারণা থেকে তারা এমনটা মনে করছে।
বিলাসবহুল পণ্যের অন্যান্য ব্র্যান্ড যেমন হারমেস ও গুচির মালিক প্রতিষ্ঠান কেরিং শিগগিরই হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন দেবে।
বিবিসির সংবাদে চীনের সাম্প্রতিক তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, চীনের অর্থনীতি এখনো মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের বেচাকেনার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খুচরা পণ্য বিক্রয়ের পরিসংখ্যান প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল।
মে মাসে চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াংহোংকোয়ানজিন নামের এক ইন্টারনেট সেলিব্রিটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনলাইনে বিলাসব্যসন প্রদর্শনের বিরুদ্ধে বেইজিং যেভাবে খড়্গহস্ত হয়েছে, তার অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে।
টিকটকের মতো সামাজিক মাধ্যম ডৌয়িনে ওয়াংহোংকোয়ানজিনের ৪০ লাখ অনুসারী আছে। চীনের ইন্টারনেট নজরদারি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বিলাসব্যসন প্রদর্শনের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছে; তার অংশ হিসেবে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।