অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যয় ও কর। এই বাস্তবতায় নানামুখী চাপের মধ্যে পড়েছে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির অর্ধেকের বেশি কোম্পানি আগামী তিন মাসের মধ্যে পণ্য ও পরিষেবার দাম বাড়াবে।
ব্রিটিশ চেম্বার্স অব কমার্সের (বিসিসি) এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, উৎপাদন ও পরিচালন খরচ ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে কর্মী নিয়োগ, বিমা প্রিমিয়াম ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির মতো চাপে পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে কোম্পানিগুলো। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, দাম বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এতে সাধারণ মানুষের ব্যয়ের ওপর প্রভাব পড়বে।
গত অক্টোবর মাসে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রথম বাজেটের ঘোষণার কয়েক মাস পর জরিপের ফল প্রকাশিত হলো। ওই বাজেটে কর্মী নিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত কর বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
জরিপে ৪ হাজার ৮০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আগামী তিন মাস, অর্থাৎ এপ্রিলের আগে পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে করা জরিপে এমন মত দিয়েছিল ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।
বাজেট ঘোষণায় যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর রাচেল রিভস জানিয়েছিলেন, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কন্ট্রিবিউশনের (এনআইসি) জন্য কোম্পানিগুলোকে বেশি অর্থ দিতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হবে ন্যূনতম মজুরির হার। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন পরিষেবার উন্নতির জন্য এ অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার।
কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকারের এ ঘোষণা। তারা বলছে, নতুন নীতির কারণে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিন-চতুর্থাংশ প্রতিষ্ঠান বলেছে, কর্মী নিয়োগের ব্যয় তাদের চাপের মূল কারণ।
জরিপে আরও দেখা গেছে, বাজেট ঘোষণার পর ব্যবসায়িক আস্থা কমেছে। আগামী বছর আয় বাড়বে বলে আশা করছে ৪৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, গত বছরের জরিপের তুলনায় যা কম।
ব্রিটিশ চেম্বার্স অব কমার্সের মহাপরিচালক শেভান হ্যাভিল্যান্ড এ পরিস্থিতিকে ‘প্রেশার কুকারের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। বাড়তি খরচ ও করের কারণে চাপ তৈরি হচ্ছে, সে কারণে এই উপমা।
শেভান বলেন, বিমার ব্যয় বৃদ্ধি বিশেষভাবে ক্ষতির কারণ হবে। ব্যবসামালিকেরা এরই মধ্যে বিনিয়োগ কমানো শুরু করেছেন এবং তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী দিনগুলোতে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে।
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২২ সালে রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পর গত বছর মূল্যস্ফীতির হার দ্রুত হারে কমেছে। কিন্তু বছরের শেষের দিকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। এমন এক সময় তা বাড়তে শুরু করেছে, যখন ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আবারও নীতি সুদহার কমানোর কথা ভাবছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করলে তা সম্ভব নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জরিপে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির শক্তিমত্তা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন উঠেছে।
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাজ্যের কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ২০২৩ সালের শেষের দিকে যে মন্দাভাব তৈরি হয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির গতি ছিল শূন্য। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস, গত বছরের চতুর্থ বা শেষ প্রান্তিকেও যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি হবে না। তবে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
লেবার পার্টি গত গ্রীষ্মে নির্বাচনে জিতে দেশ পরিচালনার ভার নেয়। তারা মূল অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন; কিন্তু সরকারি ঋণ, আবাসনসংকট, মূল্যস্ফীতি ও সাম্প্রতিক ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বাধাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ছে তারা।
গত ৩০ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের ২০২৪ সালের বাজেট পেশ করেছেন দেশটির ইতিহাসের প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী রেচেল রিভস। জুলাই মাসে ক্ষমতায় আসার ফলে প্রায় দেড় দশক পর ব্রিটেনে লেবার পার্টি দেশের বাজেট পেশ করার সুযোগ পেল।
২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের বাজেটের লক্ষ্য—অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সরকারি আয়-ব্যয়ে ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি পাউন্ডের যে ব্যবধান আছে, তা বন্ধ করা এবং ধনী ও বিত্তশালী গোষ্ঠীর ওপরে বেশি কর আরোপ করা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্রিটিশ বাজেটের সফলতা দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। এক. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে কি না এবং দুই. দেশটির মূল্যস্ফীতির হার নিচের দিকে থাকবে কি না।