আর্জেন্টিনা নারী ফুটবল দল
আর্জেন্টিনা নারী ফুটবল দল

বৈশ্বিক আয় ছাড়াতে পারে শতকোটি ডলার

চলতি ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী নারীদের ক্রীড়া নতুন উচ্চতায় উঠবে। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছর নারীদের ক্রীড়া থেকে ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন বা ১২৮ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় হতে পারে। সেটা হলে এ বছরই প্রথম নারীদের ক্রীড়া থেকে সংগৃহীত রাজস্বের পরিমাণ ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

বৈশ্বিক পেশাদার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ডেলয়েট তিন বছর আগে তাদের দেওয়া সর্বশেষ হিসাবে জানিয়েছিল, তখন থেকে তিন গুণ বেশি রাজস্ব আয় হতে পারে নারীদের ক্রীড়ায়।

নারীদের ক্রীড়ার তিনটি প্রধান ক্যাটাগরির ভিত্তিতে ওই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো হলো খেলার দিনের আয়, সম্প্রচার স্বত্ব ও বাণিজ্যিক বা বিজ্ঞাপন আয়। বাণিজ্যিক রাজস্বের মধ্যে আছে ক্লাবের প্রাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা, অংশীদারি ও অন্যান্য বিক্রয়। এই উপখাত থেকেই নারীদের ক্রীড়ার সর্বোচ্চ ৬৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা প্রায় ৫৫ শতাংশ আয় আসবে। সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আয় হবে ৩৪ কোটি ডলার বা ২৭ শতাংশ। আর খেলার দিন আয় হবে ১৮ শতাংশ বা ২৪ কোটি ডলার।

এবার দেখে নেওয়া যাক, ডেলয়েটের পূর্বাভাসে নারীদের কোন খেলা থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হবে। এ ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে থাকবে যথারীতি ফুটবল, যা মোট রাজস্বের ৪৩ শতাংশ বা ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর পেছনে থাকবে বাস্কেটবল, এই খেলা থেকে আয় হবে ২৮ শতাংশ বা ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

ভৌগোলিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হবে উত্তর আমেরিকা থেকে। মোট আয়ের ৫২ শতাংশ বা ৬৭ কোটি ডলার আসবে এই অঞ্চল থেকে। ইউরোপ থেকে আয় হবে ১৪ শতাংশ বা ১৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।

ডেলয়েটের ক্রীড়া ব্যবসা বিভাগের প্রধান জেনিফার হ্যাসকেল বলেছেন, গত কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে নারীদের খেলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ফলে নারীদের খেলার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীরা এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নারীদের খেলা এখন আলাদা বা পৃথক খেলা বা সম্প্রচারের পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এই ধারা ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে।

ডেলয়েট আশা করছে, নারীদের খেলার দল ও লিগের বাণিজ্যিক মূল্য ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকবে। এমনকি অনেক দলের মূল্য ২০২৪ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও তারা আশা করছে। সেই সঙ্গে নারীদের খেলার বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট থেকে পূর্বাভাসের ৩৩ শতাংশ রাজস্ব বা প্রায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ডেলয়েট আশা করছে, ২০২৪ সালে নারীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্প্রচারকারী টেলিভিশনগুলো মূল সময়ে সম্প্রচার করবে। এর মধ্য দিয়ে নারীদের খেলা দর্শকদের আরও কাছে চলে যাবে।

ডেলয়েটের টেলিকম ও মিডিয়া গবেষণা বিভাগের প্রধান পল লি বলেন, কয়েক বছর ধরে নারীদের খেলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এখন সম্প্রচারকারী, স্ট্রিমার ও সামাজিক মাধ্যমের কাজ হলো নারীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাগুলো দর্শকদের সামনে তুলে ধরে নতুন ভক্ত তৈরি করা ও পুরোনো ভক্তদের ধরে রাখা এবং সেই সঙ্গে তাঁদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকা ও মনে ছাপ ফেলার মতো অভিজ্ঞতা তৈরি করতে হবে।

পল লি মনে করেন, পরবর্তী কাজ হবে নিয়মিত দর্শক এবং তাঁদের মধ্যে একটি অনুগত গোষ্ঠী গড়ে তোলা, যাঁরা প্রিয় খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে নিয়মিত মাঠে বা টেলিভিশনের পর্দার সামনে হাজির হবেন। সেটা করতে হলে ক্রীড়া সংগঠক ও মিডিয়াগুলোকে একদম মূল সময়ে নারীদের খেলা সম্প্রচার করতে হবে এবং সেই সঙ্গে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করতে হবে। লক্ষ্য হবে, যাঁরা যেকোনো সময় এসব খেলা দেখতে চান, তাঁদের জন্য সেই ব্যবস্থা করা।

এদিকে বিশ্বে নারীদের খেলার জগতে যে পরিবর্তন আসছে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের মনোজগতে ফুটবল ছিল ‘পুরুষের খেলা’ হিসেবে৷ মেয়েরা মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলবেন—এটা ছিল এক অসম্ভব বাস্তবতা, সামাজিকভাবেও বলতে গেলে নিষিদ্ধ বিষয়। ছিল ধর্মীয় শক্তির বাধা। কিন্তু সেই দেশের নারী ফুটবলাররা এখন দক্ষিণ এশিয়া মাতাচ্ছেন। এমন অনেক কৃতিত্ব তাঁরা দেখিয়েছেন, সম্প্রতি পুরুষ ফুটবল দল যা করতে পারেনি।

এখন নারীদের খেলায় পৃষ্ঠপোষকেরা এগিয়ে আসছেন। ক্রীড়াপ্রেমীরা এসব খেলার জন্য অপেক্ষায় থাকছেন; অর্থাৎ পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে সেই ধারা আরও অগ্রসর হবেই বলে ধারণা করা যায়।