চীনের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্কারোপ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। তারা বলেছে, আগামী জুলাই মাস থেকে চীন থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িতে অতিরিক্ত ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ঘোষণায় চীনও নড়েচড়ে বসেছে; নিজ স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে তারা।
এ পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন উচ্চতায় উঠল বলেই ধারণা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
এক মাসেরও কম সময় আগে ওয়াশিংটন চীনের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িতে শুল্কহার চার গুণ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যেই ইউরোপীয় কমিশন জানিয়ে দিল, চীন যে এসব গাড়ি উৎপাদনে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেয়, তা মোকাবিলায় ইউরোপও অতিরিক্ত শুল্কারোপ করবে। বিওয়াইডি কোম্পানির গাড়িতে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে এসএআইসি কোম্পানির গাড়িতে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করা হবে। এর আগে গাড়িতে যে ১০ শতাংশ প্রমিত কর ছিল, তার ওপর নতুন এই কর আরোপ করা হবে।
রয়টার্স মনে করছে, চীনসহ বিশ্বের গাড়ি কোম্পানিগুলো এমনিতেই পড়তি চাহিদা মোকাবিলায় নানা ধরনের চেষ্টাচরিত্র করছে। ঠিক এই সময় গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্কারোপ করা হলো; পরিণতিতে গাড়ি কোম্পানিগুলোর ব্যয় অনেকটা বেড়ে যাবে।
বিষয়টি হলো, চীনের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির দাম কম; এই বাস্তবতায় চীনের গাড়িতে ইউরোপের বাজার সয়লাব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইউরোপের গাড়ি কোম্পানিগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইউরোপের কমিশনের প্রাথমিক হিসাব, ইউরোপের বাজারে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির হিস্যা ২০১৯ সালের চিল মাত্র ১ শতাংশ; এখন তা ৮ শতাংশে উঠে গেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তা ১৫ শতাংশে উঠে যেতে পারে। কমিশনের তথ্যানুসারে, চীনে তৈরি গাড়ির দাম ইউরোপের গাড়ির তুলনায় ২০ শতাংশ কম।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের ইউরোপ–বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু কেনিংহ্যাম রয়টার্সকে বলেন, ইউরোপীয় কমিশনের এই সিদ্ধান্ত তাদের বাণিজ্যনীতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সময়-সময় তারা নানা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়েছে ঠিক, কিন্তু আমদানি খাতের জন্য তারা এমন ব্যবস্থা কখনো নেয়নি।
চীনের সৌর প্যানেল আমদানি নিয়ে এক দশক আগে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, ইউরোপ এবার তা এড়াতে চাইছে। সেবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক ইউরোপীয় সৌর প্যানেল কোম্পানি ধসে পড়েছিল। সে জন্য এবার তারা আগেভাগেই কোমর বেঁধে নেমেছে; গত বছরের অক্টোবর মাসে চীনের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িতে ভর্তুকি নিয়ে তদন্ত শুরু করে তারা।
এই পরিস্থিতিতে চীনের বাজারে ইউরোপের বৃহত্তম কিছু গাড়ি কোম্পানির বিক্রি কমেছে, যাদের গাড়ির বড় একটি অংশ চীনে বিক্রি হয়। এ ছাড়া বিএমডব্লিউর মতো যেসব কোম্পানি চীনে গাড়ি উৎপাদন করে ইউরোপের বাজারে বিক্রি করে, তাদেরও অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে।
বেইজিং যথারীতি বলেছে, নিজেদের আইনি অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় তারা ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেবে।
তবে ইউরোপীয় কমিশনের এ সিদ্ধান্তে চাইনিজ প্যাসেঞ্জার কার অ্যাসোসিয়েশন (সিপিসিএ) তেমন উদ্বিগ্ন নয়।
সিপিসিএ সাধারণ সম্পাদক কুই দোংশু রয়টার্সকে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে সাময়িক শুল্ক আরোপ করবে, তা অপ্রত্যাশিত ছিল না; আমরা আগে থেকেই তা ধারণা করছিলাম। গড়পড়তা ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলোকে; আমি মনে করি না, সিংহভাগ চীনা কোম্পানির ওপর এ সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব পড়বে।’
কুই আরও বলেন, যেসব কোম্পানি চীনে গাড়ি তৈরি করছে, যেমন টেসলা, গিলি ও বিওয়াইডির মতো কোম্পানি, তাদের এখনো ইউরোপের বাজারে ভালো ব্যবসা করার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে চীনের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারীরা ইউরোপের বাজারে গাড়ি উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। ইউরোপ যে এমন সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আগেভাগেই আন্দাজ করতে পেরে তারা এই পথে গেছে। ইউরোপের বাজারে গাড়ি উৎপাদন করলে এত শুল্ক দিতে হবে না।