যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কার্নি
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কার্নি

লোহিত সাগরে হামলা, বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল কি হুমকির মুখে

লোহিত সাগরের তেলবাহী জাহাজে এর আগেও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু গত ৩ ডিসেম্বর যে তিনটি জাহাজে তারা হামলা করেছে, তার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ওই তিনটি জাহাজের সহায়তায় জন্য ‘ইউএসএস কার্নি’ নামে যে মার্কিন ডেস্ট্রয়ার সেদিকে যাচ্ছিল, তাকে লক্ষ্য করেও আক্রমণ চালানো হয়েছিল। তবে জাহাজটির দিকে ধেয়ে আসা মনুষ্যবিহীন এসব বস্তু গুলি করে নামানো হয়। ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, হুতি বিদ্রোহীদের হামলায় সেই তিনটি জাহাজের খুব বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

মার্কিন সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড মনে করছে, এসব হামলার যথোচিত জবাব দেওয়া উচিত। তারাও বলেছে, এসব হামলা হুতি বিদ্রোহীরা করলেও এর পেছনে ছিল ইরানের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন। তবে তাদের কথায় মনে হয়, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের কাছ থেকে তারা পেলেও হুতি বিদ্রোহীরা নিজে থেকেই হামলা চালাতে পারে। যদিও এটা পরিষ্কার, এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে আরও হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বিশ্লেষক এমিল হোকায়েম বলেছেন, এ হামলার মধ্য দিয়ে হুতি বিদ্রোহীদের সামনে বেশ কয়েকটি কৌশলগত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, এ হামলাকে গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত করে হুতি বিদ্রোহীরা আরব বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে পারে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রতি মানুষের বিপুল সমর্থন রয়েছে। হুতি বিদ্রোহীরা এর আগে অনেকবার দাবি করেছে, তারা নিপীড়িতদের পক্ষে এবং এ হামলার মধ্য দিয়ে তারা আবারও সেটা দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া তারা যে সৌদি আরবের বাইরে অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে পারে, এ ঘটনা তার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

দ্বিতীয়ত, এ হামলার মধ্য দিয়ে তারা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে লোহিত সাগর এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে যত ক্ষীণ সম্পর্কই থাকুক না কেন, তারা যে মার্কিন যুদ্ধ ও বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করতে প্রস্তুত, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে হুতিরা সেই আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এ হামলা চালানোর ক্ষেত্রে হুতি বিদ্রোহীরা যে ধরনের নৈপুণ্য দেখিয়েছে, তাতে তারা যে এখন আর বিশৃঙ্খল বাহিনী নয়, তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।

অস্ত্রবিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুতি বাহিনী ইরানের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পেয়েছে। এ ছাড়া ইয়েমেনের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তারা বেশ কিছু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে সেগুলো নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করেছে। এ ছাড়া তাদের কাছে আরও উন্নত অস্ত্র আছে। রাশিয়া ও চীনের ডিজাইন করা অস্ত্রও তাদের কাছে আছে।

অস্ত্রভান্ডারের এই বিবরণ দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, তারা এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের প্রক্সি হিসেবে কাজ করতে পারে। হরমুজ প্রণালিতে ইরান যা করার হুমকি দিয়েছে, বাব আল-মান্দাব প্রণালিতে তারা ঠিক তা-ই করার সক্ষমতা রাখে।

এই প্রণালি ইয়েমেনের একদম কোল ঘেঁষে চলে গেছে। এই প্রণালি আটকে দিলে লোহিত সাগরের মুখে ফাঁদ তৈরি করা সম্ভব। সেখান থেকে ইসরায়েলে হামলা করে তেমন একটা ফায়দা হবে না, তবে লোহিত সাগরে চলাচলরত জাহাজের ওপর হামলা করার জন্য এ অবস্থান যথাযথ।

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশ্য খুবই উন্নত। হুতি বিদ্রোহীদের হামলা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যদিও কখনো কোনো হামলায় ক্ষতি যে হতে পারে না, তা–ও নয়। হুতি বিদ্রোহীরা ঘন ঘন হামলা শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপত্তা দিতে পারবে কি না, তা ভিন্ন বিষয়। সে ক্ষেত্রে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্রগারে হামলার জন্য মার্কিনদের ওপর চাপ বাড়বে।

সম্প্রতি এক বক্তৃতায় সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও পানেটা ইরানের প্রক্সিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ সময় ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চাইবে না। ইয়েমেন সরকার অবশ্য চেষ্টা করছে, কীভাবে এই যুদ্ধের তীব্রতা হ্রাস করা যায়।