আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা কমেছে। ফলে গতকাল সোমবার দাম যতটা বেড়েছিল, সেখান থেকে খুব একটা ক্ষতির মুখে পড়েননি তেল ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি হচ্ছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের পতন এবং চীন সরকারের নীতিগত প্রণোদনার অঙ্গীকারের কারণে গতকাল বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছিল।
আজ সকালে বিশ্ববাজারে ব্রেন্টক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমে ৭২ দশমিক ০১ ডলারে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ডব্লিউটিআই ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৪ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমে ৬৮ দশমিক ২৩ ডলারে নেমে এসেছে। এর আগে গতকাল এই উভয় ধরনের তেলের দাম ১ শতাংশের বেশি বেড়েছিল।
এএনজেড রিসার্চের এক নোটে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সিরিয়ায় সরকার পতনের কারণে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
রয়টার্সের সংবাদে ভালো হয়েছে, সিরিয়া তেলের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো দেশ না হলেও তাদের কৌশলগত অবস্থান এবং রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্কের কারণে বাসারের পতন মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে।
এদিকে আসাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। আসন্ন এই ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ৫০ বছর পর সিরিয়ার শাসনক্ষমতা আসাদ পরিবারের বাইরে যাচ্ছে। এ ছাড়া আসাদের পলায়নের মধ্য দিয়ে ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান হলো।
আসাদ সরকারের পতনের পাশাপাশি আরেকটি কারণে গতকাল তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। সেটা হলো, চীন সরকার অর্থনীতিতে গতি আনতে মুদ্রানীতিতে আরও শিথিলতা আনবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। ফলে চীনের মতো দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হলে তেলের চাহিদা বাড়বে, সেই আশাবাদ থেকে তেলের দাম বেড়েছে।
কিন্তু নভেম্বরে চীনের মূল্যস্ফীতির হার পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেকটি থিতিয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চীনের আর্থিক প্রণোদনার কল্যাণে ভবিষ্যতে তেলের দাম বাড়বে।
এদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দাম কমে যাওয়ার কারণে এখন তেল কেনার সুবর্ণ সময়। তাঁদের পূর্বাভাস, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭২ দশমিক ৫০ ডলার পর্যন্ত উঠবে। এ ছাড়া নভেম্বরে চীনে বাণিজ্যের পরিসংখ্যানের দিকেও তাকিয়ে আছে বিশ্ববাজার, আজ তা প্রকাশিত হওয়ার কথা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের মজুতসংক্রান্ত আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানও প্রকাশিত হওয়ার কথা—এসব কিছুর ওপর বাজারের গতিবিধি নির্ভর করবে।
সম্প্রতি রয়টার্সের এক জরিপের ইঙ্গিত, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাসোলিন ও পেট্রলের মজুত সম্ভবত কমেছে, যদিও ডিস্টিলেটের (ডিজেল, হিটিং অয়েল ইত্যাদি) মজুত সম্ভবত বেড়েছে। আগামীকাল বুধবার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সরকারি তথ্য প্রকাশিত হবে।
এ ছাড়া নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের তেলক্ষেত্রগুলোতে জনবল নিয়োগ বেড়ে গেছে। এর অর্থ হলো, ভবিষ্যতে আরও বেশি করে তেল উৎপাদিত হবে।
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ও তাদের সহযোগীরা ওপেক প্লাস হিসেবে পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার এই জোট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তেলের উৎপাদন বাড়ানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা আরও তিন মাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ আগামী এপ্রিলের আগে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা ওপেক প্লাসের নেই। বিশ্বের তেল উৎপাদনের অর্ধেক আসে ওপেক প্লাস দেশগুলোর কাছ থেকে।