ফাইল ছবি: রয়টার্স
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনি ব্যাংক বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইসরায়েল, মানবিক সংকটের হুঁশিয়ারি মার্কিন অর্থমন্ত্রীর

ইসরায়েল তার দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ব্যাংকিং সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা করছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে ‘মানবিক সংকটের’ ঝুঁকি রয়েছে। ফিলিস্তিনি এলাকায় অর্থ পৌঁছানোর জন্য এই ব্যাংকিং চ্যানেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উত্তর ইতালির স্ট্রেসা শহরে সাংবাদিকদের জেনেট ইয়েলেন বলেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ব্যাংকগুলোকে ইসরায়েলের ব্যাংকের সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, আমি সে ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।’ ওই শহরে ধনী দেশগুলোর জোট জি৭-এর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী জানান, ফিলিস্তিনি ওই ব্যাংকিং চ্যানেলগুলো যে তহবিল পরিচালনা করে, তা ব্যবহার করে ইসরায়েল থেকে ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা আমদানি করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি এবং খাদ্য। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো প্রতিবছর ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানিতে সহায়তা করে, যার ওপর ফিলিস্তিনি মানুষের জীবন নির্ভর করে।

সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও জি৭ দেশগুলো কী করতে পারে, এমন প্রশ্ন করা হলে জেনেট ইয়েলেন বলেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম তীরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক মাস আগেই তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যেমনটা বলেছি, ইসরায়েলের ব্যাংক থেকে ফিলিস্তিনি ব্যাংকগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার (ইসরায়েলের) এই পদক্ষেপ মানবিক সংকট সৃষ্টি করবে। অবশ্যই এটা এমন বিষয়, যা নিয়ে কথা হবে।’

জেনেট ইয়েলেন বলেন, তিনি আশা করছেন পশ্চিম তীরের অর্থনীতিতে এমন একটি সিদ্ধান্তের কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে অন্যান্য দেশগুলো কথা বলবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ইসরায়েলের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য সংগ্রহ করা অর্থ ইসরায়েল যে আটকে রাখছে, সে ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা পশ্চিম তীরের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকিতে ফেলছে।

১৯৯০-এর দশকে অসলোতে স্বাক্ষর করা শান্তিচুক্তি অনুসারে, ইসরায়েল ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। এই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরে সীমিত আকারে স্বায়ত্তশাসন পরিচালনা করে। কিন্তু ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অর্থ স্থানান্তর বন্ধ করে দেয়। হামাস মূলত গাজা ভূখণ্ড শাসন করে।

নরওয়ের অংশীদার নয়

গতকাল বুধবার নরওয়ে জানিয়েছে যে তারা একটি ফিলিস্তিন দেশকে স্বীকৃতি দেবে। ২৮ মে থেকে এই স্বীকৃতি কার্যকর হবে। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়ারল্যান্ড ও স্পেন। এই পদক্ষেপ ইসরায়েলকে ক্ষিপ্ত করেছে।

এমন সিদ্ধান্তের পর ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বিজালের স্মটরিখ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে করের অর্থ স্থানান্তর বন্ধ করার হুমকি দেন। এই অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নরওয়ে যে ভূমিকা পালন করে, তা-ও যাতে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করার হুমকি দেন তিনি। নেতানিয়াহুকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আজ নরওয়ে হলো প্রথম দেশ যারা একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। তাই জুডেয়া ও সামারিয়াসংক্রান্ত কোনো কিছুতে তাদের অংশীদারত্ব থাকতে পারে না।’ পশ্চিম তীরকে বাইবেলে ওই নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি করের অর্থ নরওয়ের কাছে পাঠাতে একটি পরিকল্পনা চলতি বছর ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছিল। এই অর্থ গাজায় নিজস্ব কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।