ভারতে কর্মসংস্থানের ধীরগতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ঘরে থাকলেও কিছু কিছু রাজ্যে সরকারি চাকরিতে আবেদনের পরিমাণ বাড়ছে। সে জন্য বিরোধীরা বলছে, প্রবৃদ্ধি হলেও সে দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে না।
গত শুক্রবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, কিছু সংস্থার হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ায় ভারতের ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংস হয়েছে। এতে মানুষের কাজের সুযোগ কমেছে। পরের দিনই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বক্তব্য ছিল, ভারতে এখন বেকারত্ব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের ভবিষ্যতের বিষয়ে মোদি সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তরুণদের অসহায়ত্ব দূর হয়নি। খবর ইকোনমিক টাইমসের
সরকারির চাকরিতে আবেদন বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেছেন, আগামী দিনে কাজ তৈরির জন্য শ্রমনির্ভর শিল্প খাতের প্রসারে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এর আগেও ভারতে কাজের সুযোগ কম বলে সতর্ক করেছেন রাজন। বলেছেন, এই মানবসম্পদ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-১৫ সালে ভারতের জিডিপিতে উৎপাদন খাতের হিস্যা ছিল ১৬ শতাংশ; ২০২৩-২৪ সালে তা নেমে এসেছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশে। মাঝের সময়ে তা ছিল ১৬-১৭ শতাংশ। সে কারণে সরকারি চাকরিতে আবেদনের হার বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
বেকারত্ব ও কাজের সুযোগ হ্রাসের প্রসঙ্গে রাজনের দাবি, ভারতের বৈষম্য বেড়েছে; কিছু মানুষের হাতে বিপুল অর্থ আছে এবং তাঁরা সুখে–স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু সমাজের নিচুতলার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখনো মহামারির আগের পর্যায়ে যায়নি।
রাজন আরও বলেন, এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। অনেকে মনে করতে পারেন, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে। কিন্তু উৎপাদনশিল্পের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হবে, সেই কাজ তৈরির বেশির ভাগটাই বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে। তাঁর দাবি, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ–সক্ষমতার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কাজে লাগানো হচ্ছে। বেসরকারি খাতও মনে করছে, পুরো সক্ষমতা ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
আর এ প্রসঙ্গেই সীমিতসংখ্যক শূন্য সরকারি পদে বিপুল কর্মপ্রার্থীর আবেদনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। তিনি বলেন, মধ্য মেয়াদে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭ শতাংশ হবে। কিন্তু ভারতে এখন পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের কাজের সুযোগ কম। সে জন্য এখন বিপুল পরিমাণে কাজের সুযোগ তৈরি করা দরকার। সরকারি পরিসংখ্যান ভুলে বিষয়টি খতিয়ে দেখলেই সেই ছবি স্পষ্ট হবে।
বিশেষ করে ভারতের তরুণদের বেকারত্বের হার অনেক বেশি। দেশটির সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির (সিএমআইই) তথ্যানুসারে, ভারতের ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের বেকারত্বের হার ৪৫ দশমিক ৪। এ পরিসংখ্যানকে রীতিমতো বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ভারতের অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। তিনি মনে করেন, তরুণদের বেকারত্বের হার এত বেশি হলে তাঁদের বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যবহার করা যায়।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ কর্মসংস্থানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তিনটি প্রকল্প প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে রাজনের মত, সরকারের এসব প্রকল্পের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। দেখতে হবে, এ উদ্যোগ কতটা সফল হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে আরও কী কী করা যায়।
ভিয়েতনাম-বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে বস্ত্র ও চর্মশিল্পে উন্নতি করছে, সেখানে ভারতের পিছিয়ে থাকলে চলবে না বলে মনে করেন রঘুরাম রাজন। জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বিপুল কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুযোগ নিতে হবে ভারতকে।