আবারও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এ নিয়ে টানা সাতবার নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখল তারা। একই সঙ্গে ফেডের ইঙ্গিত, চলতি বছর যে কয়েকবার নীতি সুদ কমানো হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, ততবার তা কমানো হবে না।
এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের ঋণের সুদহার অপরিবর্তিত থাকছে; বন্ধকি ঋণের সুদহারও অপরিবর্তিত থাকবে।
ফেডের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে চলতি বছর কেবল একবার নীতি সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। যদিও মার্চ মাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর তিনবার নীতি সুদহার কমানো হতে পারে। পূর্বাভাসে ফেড আরও বলেছে, চলতি বছর মূল্যস্ফীতির সূচকও ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। অন্তত বসন্তে যে ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি থাকবে।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সামান্য কমেছে। অন্তত অনেকে যা ধারণা করেছিলেন, পরিসংখ্যান তার চেয়ে ভালো এসেছে। কিন্তু ফেডের কর্মকর্তারাও আরও কিছুটা দেখতে চাচ্ছেন অর্থাৎ নীতি সুদহার কমানোর আগে তাঁরা দেখতে চাইছেন, মূল্যস্ফীতি আরও কমে কি না। অর্থাৎ তারা একভাবে নিশ্চিত হতে চাইছেন যে মূল্যস্ফীতির হার দীর্ঘ মেয়াদে কমতে শুরু করেছে এবং হঠাৎ করে তা আবার বাড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার এখন দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের জুলাই থেকে নীতি সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে নীতি সুদহার কমানো হবে, এমন ধারণা বাজারে ছড়িয়ে পড়লেও প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় ফেড এখনো সুদহার কমানোর পথে হাঁটেনি।
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ; আগের মাস এপ্রিলের যা ছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১। সে তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার কমলেও এখনো তা ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
সিএনএনের সংবাদে বরা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই সিদ্ধান্তকে বাজির সঙ্গে তুলনা করে তারা বলেছে, সেপ্টেম্বরই হতে পারে ফেডের সেরা বাজি। তবে সে জন্য আগামী কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা কমিয়ে আনতে হবে।
ফেডের কর্মকর্তারা বরাবরই বলে আসছেন, তারা তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যাননির্ভর অর্থাৎ বাস্তবতার নিরিখে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন। টানা কয়েক মাসের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে যে প্রবণতা পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে ফেড উপসংহার করে থাকে।
ফেডের কর্মকর্তারা মনে করছেন, চলতি বছরের শুরুতে যেসব কারণে মূল্যস্ফীতির হার আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়, সেসব কারণ এখনো অব্যাহত আছে কি না। যদিও বাস্তবতা হলো মে মাসের পরিসংখ্যান কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
মুডিস অ্যানালিটিকসের বিশ্লেষক ম্যাট কোলিয়ার বলেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেসব কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল, সেই কারণগুলো যে বর্তমান পরিস্থিতিরও প্রতিফলন, তা হয়তো নয়। ফেডারেল রিজার্ভ মনে করছে, সুদ হ্রাসের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ফেডারেল রিজার্ভ আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করা সমীচীন মনে করছে।
মার্কিন অর্থনীতি অবশ্য উচ্চ সুদহার সত্ত্বেও ভালো করছে, বিশেষ করে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির দিক থেকে। তবে মার্কিনরা যে আর্থিক চাপের মুখে পড়ে যাচ্ছেন, তার সুস্পষ্ট লক্ষণ আছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের পক্ষে খরচ কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। মহামারির সময় প্রণোদনার যে অর্থ জমেছিল, তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। মানুষ আবারও বেশি বেশি ঋণ নিচ্ছে। সেই সঙ্গে নীতি সুদহারও দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার গত বছর অনেকটা কমলেও তার প্রভাব এখনো অনেকের জীবনে অনুভূত হচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভের পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষের অবস্থার অবনতি হয়েছে। প্রতি ছয়জনে একজন মাসিক পরিষেবা বিল পরিশোধ করতে পারেননি। ইকোনমিক ওয়েল বিয়িং অব ইউএস হাউসহোল্ড রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করেছে ফেডারেল রিজার্ভ।