১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৬৩ বছর পর এই প্রথমবারের মতো নারী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মিশেল বুলক। তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার (আরবিএ) বর্তমান গভর্নর ফিলিপ লোয়ের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি গত সাত বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বর্তমানে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির ফলে আরবিএ বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ রকম সময়েই নিয়োগ পেলেন মিশেল বুলক। মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে দেশটি সম্প্রতি সুদের হার বাড়িয়েছে, যা গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মিশেল বুলক বর্তমানে আরবিএর ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গভর্নর হিসেবে তাঁর সাত বছরের মেয়াদ শুরু হবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় আর্থিক পরিষেবা খাতে পুরুষদের প্রাধান্য বেশি এবং বেতন কাঠামোতে লিঙ্গবৈষম্য বেশ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
বুলক আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি দায়িত্বে আসার জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সময়, তবে শক্তিশালী বোর্ড ও নির্বাহী দল আমাকে সমর্থন করবে।’
রিজার্ভ ব্যাংকের নীতি, কার্যক্ষম ও উদ্দেশ্যগুলো যেন অস্ট্রেলিয়ার জনগণের জন্য আরও মঙ্গল বয়ে আনতে পারে, সে লক্ষ্যেই মিশেল বুলক কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান। প্রায় চার দশক আগে তিনি একজন বিশ্লেষক হিসেবে আরবিএতে যোগ দেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে আরবিএর ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি সহকারী গভর্নর এবং অর্থ প্রদান নীতি বিভাগের প্রধানসহ সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ এক টুইট বার্তায় বলেন, মিশেল বুলক হচ্ছেন একজন অসাধারণ অর্থনীতিবিদ এবং তিনি দীর্ঘদিন বেশ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত আছেন।
অ্যান্টনি অ্যালবানিজ আরেকটি টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও আরবিএকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’
অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী ক্যাথি গ্যালাঘের বলেন, ‘দেশের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে মিশেলের নিয়োগ অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
এদিকে মিশেলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আরবিএর বিদায়ী গভর্নর ফিলিপ লোয়ে বলেন, ব্যাংকটি একটু সুযোগ্য গভর্নর পেয়েছে। তিনি গত মাসে একটি শিল্প সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ানদের আরও বেশি কাজ করা উচিত ও ঋণের খরচ মোকাবিলা করার জন্য কম খরচ করা উচিত—এমন কথা বলার পর বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন। সম্প্রতি আরবিএর নীতি সুদের হার ১২ বারের মতো বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে তিনি বলেন, দেশবাসী ভালো করছেন।
বর্তমানে আরবিএ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চাপের মধ্যে রয়েছে। এতে দেশটির বাজেটের ওপর চাপ পড়েছে।
গত মে মাস থেকে আরবিএ ১২ বার নীতি সুদের হার বাড়িয়েছে, যা নিয়ে দেশটির অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বর্তমানে আরবিএর নীতি সুদের হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তাত্ত্বিকভাবে সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ ঋণকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে এবং মানুষকে কম ব্যয় করতে উৎসাহিত করে, যা মূল্যস্ফীতি কমে আনতে সাহায্য করে।
গত ৪০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম অস্ট্রেলিয়া সরকার তাদের প্রথম বাহ্যিক পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে। পর্যালোচনায় ৫১টি সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি পরিষ্কার মুদ্রানীতি কাঠামো এবং বৃহত্তর জবাবদিহির আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক পরিষেবা খাতে সর্বোচ্চ লিঙ্গবৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। গত বছর এই খাতে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পারিশ্রমিকে ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ পার্থক্য ছিল।