বছরের শেষ ভাগে এসে আবার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে গুগল। বছর শেষে ১০ শতাংশ কর্মী কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। এ দফায় মূলত ব্যবস্থাপক পদমর্যাদার কর্মীরা চাকরি হারাবেন বলে স্পষ্ট করেছেন সংস্থার প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই। কারণ আর কিছু নয়, এত দিন ধরে যে কারণে ছাঁটাই হচ্ছে, সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার ব্যবস্থাপক, পরিচালক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা কর্মীরা কাজ হারাবেন। ছাঁটাইয়ের তালিকায় অযোগ্য কর্মীদেরও রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গুগল। যেসব কর্মীর পদ বিলুপ্ত করা হবে, তাঁদের একাংশকে ব্যক্তিগত প্রদায়ক হিসেবে নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে। অন্যদের নতুন কোনো ভূমিকায় দেখা যাবে না।
গুগলের কর্মীদের জন্য এই অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত দুই বছরে গুগলের কর্মীরা বেশ কয়েকবার এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বহুজাতিক এই কোম্পানির সক্ষমতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ‘গুগল’ থেকে চাকরি হারান ১২ হাজার কর্মী।
চলতি বছরের মে মাসে গুগলের মূল দল থেকে ২০০ জনকে ছাঁটাই করে যুক্তরাষ্ট্রের এই বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। শুধু তা–ই নয়, ওই সময় বেশ কিছু কর্মীর বদলিও করেন সিইও পিচাই। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রকৌশল থেকে চাকরি হারান ৫০ জন। ছয় মাসের মধ্যেই আবার কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তায় হাঁটতে চলেছে ‘গুগল’।
সর্বশেষ এই ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের পেছনে কৃত্রিম মেধাভিত্তিক কোম্পানি ওপেনএআইয়ের বড় ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃত্রিম মেধাভিত্তিক বট চ্যাটজিপিটি বাজার মাত করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ে গুগল। স্পষ্টতই এআইয়ের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে তারা। এরপর শুরু হয় তাকে ধরার প্রাণান্তকর চেষ্টা। গুগলে নিয়ে আসে বার্ড, পরবর্তী সময়ে যা জেমিনিতে রূপান্তরিত হয়। জানা গেছে, এ ধরনের নতুন নতুন আরও কিছু প্রযুক্তি বাজারে আনছে ‘ওপেনএআই’। তাই প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকতে আগেভাগে কোম্পানির খরচ কমানোর লক্ষ্যে এই ছাঁটাই করবে গুগল।
মহামারির পর থেকেই প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাই চলছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে রীতিমতো ছাঁটাইয়ের মহোৎসব চলেছে এই খাতে। চলতি বছর এ নিয়ে অত শোরগোল না হলেও এখন পর্যন্ত প্রযুক্তি খাতের ৪৫৭টি কোম্পানিতে ১ লাখ ৩০ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ করা হয়েছে বলে টেকক্রাঞ্চের খবরে বলা হয়েছে। চলতি বছর টেসলা, অ্যামাজন, গুগল, টিকটক, স্ন্যাপ ও মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিতে ছাঁটাই হয়েছে।
বড় কোম্পানির পাশাপাশি ছোট ছোট কোম্পানিতেও ছাঁটাই হয়েছে। অনেক ছোট কোম্পানি কার্যক্রম পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছে।
এর আগে ছাঁটাই সম্পর্কে পিচাই বলেছিলেন, এই ছাঁটাইয়ের কারণে কর্মীদের মনোবল দুর্বল হয়ে গেছে। যদিও তিনি সেই ছাঁটাইয়ের সাফাই গাইতে গিয়ে বলেন, ছাঁটাই করা না হলে ভুল হতো। পরিস্থিতি খুব কঠিন ছিল, কিন্তু ছাঁটাই প্রয়োজনীয় ছিল।
সুন্দর পিচাই আরও বলেন, ছাঁটাই করা না হলে কোম্পানিতে জনবলের আধিক্য হতো; এখন এআইসহ বিভিন্ন খাতে যে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে, তা খুবই কঠিন হয়ে যেত।