এক্সপোর জন্য কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে জাপান, আরও যেসব প্রস্তুতি

এই হেলিকপ্টারে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয়
এই হেলিকপ্টারে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয়

২০২৫ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব মেলা বা এক্সপো ২০২৫। এটা হবে জাপানে এই এক্সপোর তৃতীয় আয়োজন। এর আগে ১৯৭০ ও ২০০৫ সালে জাপানে এক্সপো অনুষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ওসাকা ও নাগোইয়ার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। এবারের এক্সপোও অনুষ্ঠিত হবে ওসাকা শহরে। অর্থাৎ ঠিক ৫৫ বছর পর বিশ্ব মেলা এক্সপো আবারও আসছে জাপানের ওসাকা শহরে। বাংলাদেশ এই মেলায় অংশগ্রহণ করবে।

বিশ্ব অর্থনীতি জটিল একসময় অতিক্রম করছে। এই সময় ব্যয়বহুল এই মেলা আয়োজন নিয়ে জাপানে শুরুতে অনেকের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ দেখা গেলেও এখন তা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই পুরো দমে এগিয়ে চলেছে এক্সপোর জন্য নির্ধারিত স্থানের নির্মাণকাজ।

২০২৫ সালের এক্সপোর স্থান হিসেবে আয়োজকেরা সমুদ্র বেছে নিয়েছেন। শহরের অদূরে ওসাকা উপসাগরের নির্দিষ্ট স্থান ভরাট করে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে ইয়ুমেশিমা দ্বীপ। ১৪৫ হেক্টরের সেই দ্বীপে বসবে বিশ্ব মেলা; একই সঙ্গে যেখানে তৈরি করা হবে বিশাল আকারের একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও নতুন একটি সাবওয়ে যোগাযোগ লাইন ও স্টেশন। দ্বীপের ভেতরে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে পাশের একটি দ্বীপ মাইশিমায়। গাড়ির আরোহীদের সেখান থেকে বাসে করে যেতে হবে এক্সপোর স্থানে।

এক্সপোর প্রস্তুতি এখন পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখানোর জন্য গত সপ্তাহে টোকিওর কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে এক্সপোর স্থান পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে নির্মাণকাজ চলতে থাকায় কৃত্রিম দ্বীপে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আয়োজকদের ব্যবস্থাপনায় হেলিকপ্টারে করে ওপর থেকে তা দেখার সুযোগ সাংবাদিকদের হয়। ছোট আকারের হেলিকপ্টারে মোট তিনটি ফ্লাইটের প্রতিটিতে তিন থেকে চারজন করে সাংবাদিক পঁয়তাল্লিশ মিনিটের আকাশভ্রমণে অংশ নেন।

জানা গেছে, এক্সপোর জন্য নির্ধারিত দ্বীপের জায়গার ঠিক মাঝখানে তৈরি করা হবে বিশাল আকারের একটি রিং বা বলয়, যে বলয়ের ভেতরে থাকবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন। এর পুরোটা তৈরি হবে কাঠ দিয়ে। বলয়ের ছাদের ব্যাস হবে আনুমানিক দুই কিলোমিটার এবং উচ্চতা হবে ১২ মিটার। নির্মাণ শেষ হওয়ার পর এটা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠের ভবন। বলয়ের বাইরে থাকবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানির প্যাভিলিয়ন। জাপানের বেসরকারি খাতের ১৩টি নেতৃস্থানীয় কোম্পানি এক্সপোতে যোগ দিচ্ছে।

কৃত্রিম দ্বীপের একাংশ

এক্সপো স্থানের নকশা তৈরির মূল দায়িত্ব জাপানি স্থপতি ফুজিমোতো সোওসুর। ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’—এই ধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে এক্সপোর স্থানের নকশা করেছেন তিনি। আকাশ, সমুদ্র ও সাগর—এই তিনের দেখা দর্শকেরা সেখানে পাবেন। বিদ্যুচ্চালিত বাস এক্সপো এলাকার ভেতরে চলাচল করবে; এই বাসে করে দর্শকেরা এক্সপো চত্বরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন।

মোট ১৫৩টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এক্সপো ২০২৫-এ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে, যে তালিকায় বাংলাদেশও আছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য তিন ধরনের প্যাভিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সব কটিই থাকবে বলয়ের ভেতরে।

বড় আকারের এ টাইপ-ভুক্ত যেসব প্যাভিলিয়ন অংশগ্রহণকারী দেশ নিজেদের মতো তৈরি করে নিয়ে ভেতরের সাজসজ্জাও নিজেরা করতে ইচ্ছুক, তাদের নির্মাণ খরচের পুরোটা নিজেদের বহন করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে বি টাইপ প্যাভিলিয়ন; যেগুলোর বাইরের কাঠামো আয়োজকেরা তৈরি করে দেবে এবং অংশগ্রহণকারী দেশ নিজেদের পছন্দমতো ভেতরের সাজসজ্জা করে নেবে। ভেতরের সব খরচ অংশগ্রহণকারীদের বহন করতে হবে। তৃতীয় পর্যায়ে আছে সি টাইপ প্যাভিলিয়ন, যার পুরোটা আয়োজকদের অর্থে তৈরি করা হবে। তবে এসব প্যাভিলিয়ন সম্পূর্ণ আলাদা হবে না।

দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় নির্মাণাধীন বলয়

তিনটি প্যাভিলিয়ন একক একটি কাঠামোর ভেতরে থাকবে। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ প্যাভিলিয়ন তৈরির খরচ নিয়ে আপত্তি তোলার পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফলে অনেক দেশ এখন এক্সপো ২০২৫-এ অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করছে।

টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের বি টাইপ প্যাভিলিয়ন, অর্থাৎ এর বাইরের কাঠামো আয়োজকেরা তৈরি করে দেবে এবং বাংলাদেশ নিজের উদ্যোগে ভেতরের নকশা ও সাজসজ্জার কাজ শেষ করবে। দূতাবাস সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত এক্সপোর আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীদের দুটি বৈঠকে যোগ দিয়েছে এবং আগামী মাসে নির্ধারিত তৃতীয় বৈঠকেও যোগ দেবে। আয়োজকদের নির্ধারিত সব ধরনের সূচি বাংলাদেশ ইতিমধ্যে পূরণ করেছে বলেও দূতাবাস সূত্র জানায়।

হেলিকপ্টার থেকে দেখা এক্সপোর কৃত্রিম দ্বীপে এগিয়ে চলা নির্মাণ কাজ

এসব বৈঠকে সাধারণত অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্যাভিলিয়নের কনসেপ্ট ডিজাইন নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং দ্রুতই তা শেষ হবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদাধিকার বলে এক্সপোতে বাংলাদেশের কমিশনার জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বি ও সি টাইপ প্যাভিলিয়ন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এক্সপোর লোগো বা প্রতীক চিহ্ন নির্ধারণ করা হয়েছে নৃত্য ও হাস্যরত একটি রূপক চিহ্ন। আয়োজকেরা মনে করছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা রকম অগ্রগতি দেখার মধ্য দিয়ে এক্সপো দর্শকদের যে আনন্দ দিতে সক্ষম হবে, তারই প্রতীক হচ্ছে এই লোগো। অন্যদিকে এক্সপোর মাসকট বা আনুষ্ঠানিক চরিত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মিয়াকু-মিয়াকু’ নামের একটি কাল্পনিক চরিত্রকে, যার মুখের চারদিকটা ঘিরে আছে এক্সপোর লোগো।

২০২৫ সালের এক্সপো শুরু হবে সে বছর ১৩ এপ্রিল, যা চলবে ১৮৪ দিন। শেষ হবে ১৩ অক্টোবর।