বৃহত্তম করপোরেট বিনিয়োগ

ভারতে চিপ কারখানা করবে ফক্সকন-বেদান্ত

ভারতের বেদান্ত গোষ্ঠী ও তাইওয়ানের ফক্সকন যৌথভাবে গুজরাটে সেমিকন্ডাক্টর চিপ ও বৈদ্যুতিন ডিসপ্লে প্যানেলের কারখানা তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের উপস্থিতিতে গত মঙ্গলবার গুজরাট সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাদের।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের বক্তব্য, বিনিয়োগের অঙ্ক ১ দশমিক ৫৪ লাখ কোটি রুপি। এই উদ্যোগের ফলে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

বিনিয়োগের এই অঙ্ক স্বাধীন ভারতের করপোরেট খাতের ইতিহাসে বৃহত্তম বলেও দাবি গুজরাট সরকারের। এটি হতে চলেছে ভারতের প্রথম সেমিকন্ডাক্টর চিপ কারখানা।

গাড়ি, মুঠোফোন ও অন্যান্য বৈদ্যুতিন পণ্য তৈরি করতে সেমিকন্ডাক্টর চিপ দরকার হয়। কিন্তু ভারতে এখন পর্যন্ত এই যন্ত্রাংশের উৎপাদন হয় না। চীন, তাইওয়ান, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। কিন্তু গত আড়াই বছরে মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বে এর উৎপাদন ও সরবরাহ ধাক্কা খেয়েছে। তাতে সমস্যায় পড়েছে ভারতের শিল্পমহলও। দেশটির গাড়িশিল্প একাধিকবার জানিয়েছে, সম্প্রতি চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও সেমিকন্ডাক্টর চিপের অভাবে চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ভারতে চিপ উৎপাদনের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

এ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটারে লিখেছেন, এই চুক্তি ভারতের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের পরিকল্পনাকে গতি দেবে। ১ দশমিক ৫৪ লাখ কোটি রুপির বিনিয়োগ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়া উৎসাহিত করবে; তৈরি হবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ। উপকৃত হবে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প।
গুজরাট রাজ্য সরকার জানিয়েছে, মোট বিনিয়োগের মধ্যে ৯৪ হাজার কোটি রুপি ব্যয় হবে ডিসপ্লে উৎপাদন ইউনিট তৈরিতে। বাকি ৬০ হাজার কোটি রুপি খরচ হবে সেমিকন্ডাক্টর কারখানায়। বেদান্ত ও ফক্সকনের অংশীদারি যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং কোভিডের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলো চীননির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে তাদের পছন্দের জায়গা হচ্ছে ভারত। তাই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নরেন্দ্র মোদি সরকার ২৬ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠন করেছে। মোট ১৪টি শিল্পের জন্য আগামী পাঁচ বছর এই অর্থ ব্যয় করা হবে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং এবং তাইওয়ানের ফক্সকন এই তহবিলের সুবিধা নিয়ে ভারতের মুঠোফোন উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। শুধু বিদেশি কোম্পানি নয়, ভারতীয় কোম্পানি ওলা এই সুবিধা নিচ্ছে। বেঙ্গালুরু শহরের ৯০ কিলোমিটার দূরে একটি বৃহৎ স্কুটার কারখানা স্থাপন করেছে তারা। তাদের লক্ষ্য, শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া।

এই বাস্তবতায় নতুন এই চিপ কারখানা ভারতের চীননির্ভরতা কাটিয়ে পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা। এতে ভারতের গাড়ি ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে গতি আসবে।