রাশিয়ার আর্থিক কেন্দ্রে যুদ্ধের আগমন, ড্রোন হামলার পর উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা

মস্কো শহরের একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের কাছে জরুরী বিভাগের কর্মীরা কাজ করছেন। খবরে বলা হয়, ইউক্রেন মস্কোতে ড্রোন হামলা চালায়
ছবি রয়টার্স

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অভিজাত রুশ ব্যবসায়ীদের কাছে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ছিল নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। তবে সম্প্রতি মস্কোর আর্থিক কেন্দ্রের ঠিক মাঝখানে দুটি ড্রোন হামলা ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথা যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ব্যবসার পাশাপাশি এখন কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।

রয়টার্স জানায়, গত রোববার প্রথম প্রহরে মস্কভা–সিটি নামে পরিচিত আর্থিক কেন্দ্রে এই ড্রোন হামলা হয়। ক্রেমলিনের কয়েক মাইল পশ্চিমে কয়েকটি আকাশচুম্বী ভবন নিয়ে মস্কোর এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এ নিয়ে এক সপ্তাহে দ্বিতীয়বার ড্রোন হামলার শিকার হলো অঞ্চলটি, যদিও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের এই ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে।

মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিনের ভাষ্যমতে, মঙ্গলবার একটি ড্রোন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেখানকার একটি ভবনের ২১ তলায় আঘাত করে। ফলে ভবনটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দুটি ঘটনাতে কেউ আহত হননি এবং ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সামান্য। ক্রেমলিন শুরু থেকে বলে আসছে, রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে এবং পুরো পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে এই হামলা তাদের জন্য অস্বস্তিকর।

প্রথম হামলার পর কর্মীদের রাতের বেলা কার্যালয়ে না থাকার অনুরোধ করেছে বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ইয়ানডেক্স। কোম্পানিটি কর্মীদের উদ্দেশে এক বার্তায় বলেছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কর্মীদের রাত একটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কার্যালয়ে না থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।

অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির মতো ইয়ানডেক্সেও ধরাবাঁধা কাজের সময় নেই, সে কারণে রাতের বেলা কার্যালয়ে না থাকার এই নির্দেশনা। রয়টার্স এ বিষয়ে ইয়ানডেক্সের মন্তব্য চাইলে তারা সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।

সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেন একরকম মরিয়া হয়ে মস্কোতে হামলা চালাচ্ছে, তবে এসব হামলা প্রতিহত করতে মস্কো সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিয়েভ রোববারের এই হামলার দায় স্বীকার করেনি, যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ ধীরে ধীরে রাশিয়ার ভূখণ্ডে বা এর প্রতীকী কেন্দ্রগুলোতে ফিরে আসছে।

গত মে মাসেও ক্রেমলিনে দুটি ড্রোন হামলা হয়েছিল। অন্যান্য হামলা মস্কো নদীর পাশে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের কাছে এবং রুবলিওভকা শহরতলির ভবনগুলো লক্ষ্য করে করা হয়েছিল। রাশিয়ার বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি এ অঞ্চলে বসবাস করেন।

এ হামলার পর ব্যবসায়ীদের মনোভাব বুঝতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী এ হামলা নিয়ে ভয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কেউ কেউ আবার নির্বিকার।

এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের বেশির ভাগ কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। আরেক আর্থিক পরিষেবা কর্মকর্তা বলেন, তিনি মনে করেন না যে এই আক্রমণ মানুষের মস্কভা-সিটিতে যাওয়া ঠেকাতে পারবে।

রুশ অনলাইন মিডিয়া গ্রুপ ম্যাশ পরিচালিত একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল এই হামলায় ডিজিটাল মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্যালয়ের ক্ষতির ছবি সম্প্রচার করেছে।

ম্যাশ জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় কর্মীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশনা দিয়েছে এবং বেশির ভাগ কর্মীকে অস্থায়ীভাবে বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে, যদিও এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও জবাব দেয়নি ডিজিটাল মন্ত্রণালয়।

রাশিয়ার বড় একটি কোম্পানির এক কর্মী এই আক্রমণকে ভীতিকর বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর কেউ নিরাপদ নয়, আমিও এখন ভয় পাচ্ছি।’