মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বড় সফলতা অর্জন করেছে শ্রীলঙ্কা। একসময় মূল্যস্ফীতিতে জেরবার এই দেশে মূল্যস্ফীতির হার আগস্ট মাসে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এএফপির সংবাদে বলা হয়েছে, আগের বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ শতাংশ; চলতি বছরের জুলাই মাসে যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সেখান থেকে একধাপে তা ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
খাদ্য থেকে শুরু করে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য—সবকিছুর দাম আগস্ট মাসে কমেছে। সংবাদে আরও বলা হয়েছে, গত জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের দাম ২২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে পানি, জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের দাম কমেছে। মূলত এসব কারণে আগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি এতটা কমেছে।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে গৃহায়ণ, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির দাম আগের মাসের তুলনায় দাম কমেছে। এসব পণ্যের দাম জুলাই মাসের তুলনায় কমেছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। জুলাই মাসেও জুনের তুলনায় দাম কমেছিল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে শিক্ষায় মূল্যস্ফীতির হার অনেকটা বেশি—৭ দশমিক ২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে অ্যালকোহলভিত্তিক বেভারেজ ও তামাকপণ্যের। এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া যোগাযোগ ও পরিবহন খাতের মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫ ও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার সাধারণ নির্বাচন; সেই নির্বাচনের আগে পণ্যমূল্য খুব একটা বাড়বে না বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে ফার্স্ট ক্যাপিটাল হোল্ডিংসের গবেষণাপ্রধান দিমান্থা ম্যাথু বিজনেস টাইমসকে বলেন, রাজনৈতিক ও নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে প্রায় সবকিছু থমকে আছে—মানুষ ব্যয় করা বা বিনিয়োগ করার বিষয়ে কথাবার্তা বা আলাপ-আলোচনা একরকম বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশে উঠেছিল। সেখান থেকে পরিস্থিতির উত্তরণ হয়েছে।
২০২২ সালে ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে জোর দেয়। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তার ফল পেতে শুরু করেছে দেশটি। টানা পাঁচ প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার পর ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তখন প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সে বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রবৃদ্ধির হার আরও বেড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়। টানা দুই বছর অর্থনৈতিক সংকোচনের পর চলতি বছর সামগ্রিকভাবে দেশটি প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
অর্থনীতি পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। ফলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। জুলাই মাসের শেষে দেশটির রিজার্ভ দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৫৭০ কোটি ডলার; ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৪৪০ কোটি ডলার। অর্থাৎ সাত মাসে রিজার্ভ বেড়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং অর্থ পাচার বন্ধ হওয়া।