নিজস্ব মুদ্রা রুপিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও গ্রহণযোগ্য করার পথে আরেক ধাপ এগোল ভারত। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেন রুপি ও দিরহামে হবে—দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে এ নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর খালেদ মোহাম্মদ বালামা এ সমঝোতা স্মারকে সই করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের মধ্যে শনিবার ওই সমঝোতা স্মারক সই হয় বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এদিকে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভারতের ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের (আইপিপি) মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের বিষয়েও একমত হয়েছে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
সংবাদে বলা হয়েছে, ইউপিআই-আইপিপি সংযোগের মধ্য দিয়ে উভয় দেশের মধ্যে দ্রুত, নিরাপদ, সহজসাধ্য ও সাশ্রয়ী উপায়ে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা সম্ভব হবে। একইভাবে দুই দেশের কার্ড সুইচের সংযোগ স্থাপিত হলে উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ কার্ড গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি নির্বিঘ্ন করতে তাৎক্ষণিক অর্থ পরিশোধের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের বিষয়েও উভয় দেশ একমত হয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এভাবে সরাসরি লেনদেন করার প্রবণতা বাড়ছে। এতে বিল পরিশোধের ব্যয়ও কমে আসছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সেই সঙ্গে দেশটিতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় কাজ করেন। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকে। সেই মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। তার জেরে বেড়ে যায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার।
সেই সঙ্গে বাড়ে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে আমদানিকারী দেশগুলোর আমদানি ব্যয় অনেকটা বেড়ে যায়। বৃদ্ধি পায় মূল্যস্ফীতি; তৈরি হয় ডলার–সংকট। এ বাস্তবতায় বিশ্বের অনেক দেশ এখন ডলারকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন মুদ্রায় লেনদেন করার চেষ্টা করছে।
এদিকে অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা সরকার ভারতীয় মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ইকোনমিক টাইমসের আরেক খবরে বলা হয়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন মুদ্রা চালু হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে কলম্বো।
শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অভিন্ন মুদ্রা হিসেবে ভারতীয় মুদ্রা রুপি ব্যবহারের সম্ভাবনা আমরা খারিজ করছি না।’
সেটা হলে ভারতীয় রুপি একধাপে অনেকটাই শক্তিশালী হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ মোট ১৯টি দেশের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন করছে ভারত। ২০২২ সালের জুলাই মাসে আরবিআই এ লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যদিও তার আগে থেকেই ভারত বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করছে।
বাংলাদেশ ছাড়া আরও যেসব দেশের সঙ্গে ভারত এখন রুপিতে লেনদেন করছে, তার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বাহরাইন, কিউবা, মিসর, ইরান, ইরাক, কুয়েত, ওমান, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া, উজবেকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও শ্রীলঙ্কা।