বিনিয়োগের সীমা ও ঘোষণাসংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে আদানি গোষ্ঠীতে অফশোর তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে বলে ভারতের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত দুটি সূত্র গতকাল সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য দিয়েছে।
তবে যাঁরা এই তথ্য দিয়েছেন, তাঁরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি তাঁদের নেই। রয়টার্স আদানি গোষ্ঠী ও সেবির মন্তব্য চাইলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
রয়টার্স এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন করেছিল। গত বছরের আগস্টে তারা সেই প্রতিবেদন করে। বলা হয়, আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল মরিশাসের একটি তহবিল থেকে। সেই তহবিলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী অংশীদারেরা।
‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)’ আদানি গ্রুপের আর্থিক লেনদেন বিষয়ে এই তদন্ত করে। তাদের জোগাড় করা নথিপত্র ও অনুসন্ধানের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এই সংবাদ প্রকাশ করে রয়টার্স।
নথিতে দেখা গেছে, আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন বছরের পর বছর ধরে গোপনে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনেছেন। ঠিক সেই সময় উল্কার গতিতে আদানির উত্থান হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চও একই অভিযোগ তুলেছিল, যদিও তা অস্বীকার করেছিল আদানি গোষ্ঠী। সেই প্রতিবেদনের জেরে অবশ্য গ্রুপটির বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়। ব্যক্তিগত সম্পদ হারান মালিক গৌতম আদানিও।
হিনডেনবার্গের অভিযোগ ছিল, নিজেদের শেয়ার ঘুরপথে কিনে দাম বাড়াত আদানি গোষ্ঠী, অর্থাৎ শেয়ার জালিয়াতি করত। গৌতম আদানি ওই অভিযোগ নাকচ করে দিলেও এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্ত চলাকালে সামনে আসে ওসিসিআরপির চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন।
সেবি একটি অফশোর তহবিলের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক খতিয়ে দেখছে। সেই অফশোর তহবিল আদানি গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই বিনিয়োগ করেছে কি না, এটাই সেবির তদন্তের বিষয়। যদিও আদানি গোষ্ঠী এই অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে আদানি গোষ্ঠীর বেশ কিছু অফশোর বিনিয়োগকারীকে নোটিশ দিয়েছে সেবি। তারা সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ও তথ্য প্রকাশ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন নিয়ে আলোচনা করেছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, অফশোর তহবিলগুলো বিভিন্ন বিনিয়োগের তথ্য পৃথকভাবে প্রকাশ করেছিল। সেবি চায়, এরা সামগ্রিকভাবে গোষ্ঠী পর্যায়ে বিনিয়োগের তথ্য দিক। আটটি বিনিয়োগ তহবিল দোষ স্বীকার না করে জরিমানা দিয়ে এই অভিযোগের সমাধান করেছে।