সরকারের চাপে কি অস্তিত্বই হারাবে আলিবাবা?

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

দুই দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চীনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা। তবে এতটা সময় পার করা প্রতিষ্ঠানটির জন্য এই বছরটা বলা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চীনের সর্বাধিক বিখ্যাত টেক সংস্থাটি নিজের দেশে ও বিদেশে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যা মোকাবিলা করতে না পারলে হয়তো এই কোম্পানির অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে।

খুচরা বিক্রেতাদের জন্য বিশ্বের অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্ম আলিবাবা। আলিবাবার একটি অংশ ‘আলিএক্সপ্রেস’। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাকে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিনিয়তই উত্থান-পতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শীর্ষ ধনীর কাতারে লিখিয়েছিলেন নাম। অবশ্য এ বছরই তাঁকে সরিয়ে চীনের শীর্ষ ধনীর স্থানটি নিয়েছেন পানি ব্যবসায়ী ঝং শানশান।

অভ্যন্তরীণ চাপে আলিবাবা

বেশ কিছুদিন ধরে নিজ দেশেই সরকারের খড়্গের মুখে পড়েছে আলিবাবা। চীন সরকার বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। সেই সঙ্গে চীনের বৃহত্তম অনলাইন সংস্থাগুলোর একচেটিয়া ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ এনেছে দেশটির সরকার। বেইজিংয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায় নতুনভাবে এই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে সরকার। নতুন নিয়মে কেবল ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবাই নয়, জ্যাক মার অ্যান্ট গ্রুপ, টেনসেন্ট ও মেটুয়ানের মতো টেক কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে।

মার্কিন তোপের মুখে

ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টালেও মার্কিন তোপ থেকে এত সহজে হয়তো রেহাই মিলবে না আলিবাবার। ওয়াশিংটন এখনো হুমকি আলিবাবার জন্য। বিদায়বেলা ট্রাম্প প্রশাসন আলিবাবাসহ আরও দুটি শীর্ষস্থানীয় চীনা প্রযুক্তি সংস্থায় মার্কিন বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করার নির্বাহী আদেশে সই করেছে। এতে বলা যায় মার্কিন-চীন উত্তেজনা সম্ভবত খুব শিগগির শেষ হচ্ছে না। এর মধ্যে সম্প্রতি জ্যাক মা ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন বলে একটি সন্দেহ দানা বাঁধে জনমনে। ৫৬ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ীকে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন এ নিয়ে তোলপাড়, তখন এ ব্যাপারে বেইজিংভিত্তিক প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিডিএ চায়নার চেয়ারম্যান ডানকান ক্লার্ক বলেন, ‘আমার ধারণা, তাঁকে (জ্যাক মা) দৃশ্যপটের বাইরে থাকতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতি একেবারের ভিন্ন রকম একটি পরিস্থিতি।’

সরকারি খড়্গ যেভাবে পড়ছে আলিবাবার ওপর

তাই বলা যায়, সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না আলিবাবার জন্য। হিনরিচ ফাউন্ডেশনের গবেষণা ফেলো ও সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো অ্যালেক্স ক্যাপ্রি বলেন, অন্য বড় বড় প্রযুক্তির মতো আলিবাবাও অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। ক্যাপ্রি আলিবাবাসহ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের উদ্বেগের বিষয়ে চীনের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান বাধার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর কর্মীদের উদ্দেশে দেশের প্রযুক্তি নেতাদের লাগাম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, গত মাসে প্রেসিডেন্ট ২০২১ সালের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসা করার বিষয়টি বন্ধ করতে জোরদার চেষ্টার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে চীন সরকার বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনা হচ্ছে, গত বছরের অক্টোবরে আলিবাবার জ্যাক মা একটি আলোচনা সভা করেছিলেন। সেখানে তিনি চীনের নিয়ন্ত্রক এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমালোচনা করেন। এই তদন্তের সিদ্ধান্তের পেছনে জ্যাক মার ওই সমালোচনা অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকে। ওই সভায় জ্যাক মা বলেছিলেন, চীনা ব্যাংকগুলো ‘বন্ধকি দোকান’ মানসিকতা নিয়ে পরিচালিত হয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেসরকারি প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষায় এ-জাতীয় তদন্ত হয়তো হরহামেশাই করবে সরকার। এর আগেও বেসরকারি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় যুক্ত করতে বাধ্য করেছিল চীন সরকার। ২০১৮ সালে নতুন প্রযুক্তি আনার জন্য অ্যান্ট গ্রুপের আলিপেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইউনিপের সঙ্গে জোট বাঁধতে হয়েছিল।

আলিবাবার ব্যবসা মূলত চীনে থাকলেও এর কার্যক্রমের যেকোনো বড় পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলে। সংস্থাটি ২০১৪ সাল থেকে ওয়াল স্ট্রিটে ব্যবসা করছে। জাপানের সফট ব্যাংক এই কোম্পানির অন্যতম শেয়ারহোল্ডার। এখন দেখার বিষয় এত সব চাপের মুখে নিজেদের একচেটিয়া সাফল্য কতটুকু ধরে রাখতে পারে আলিবাবা।