ভারতের সেবা খাত শক্তি হারিয়েছে, ডিসেম্বরে পিএমআই নভেম্বরের ৫৩.৭ থেকে কমে ৫২.৩ পয়েন্টে নেমেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার কারণে ভারতে নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে দেশটির অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। ফলে বিদায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স বা পিএমআই সূচক কমে ৫২ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। নভেম্বরে এই সূচক ছিল ৫৩ দশমিক ৭ পয়েন্ট। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় পিএমআই সূচক প্রায় দেড় পয়েন্টের মতো কমেছে।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক বেসরকারি জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। নিক্কেই/আইএইচএস মার্কিট সার্ভিসেস জরিপটি করেছে।
এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত ধীরে ধীরে করোনভাইরাসজনিত মন্দা থেকে বেরিয়ে পুনরুদ্ধারের পথে ফিরে আসছে। কিন্তু শিগগিরই দেশটি করোনা মহামারি শুরু হওয়ার ঠিক আগের জায়গায় ফিরে যাবে, এমনটা অবশ্য এখনো আশা করা হচ্ছে না। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অন্যতম চালিকা শক্তি সেবা খাত এখনো ঘুরে দাঁড়ায়নি। তবে পিএমআই সূচক এ নিয়ে টানা তিন মাস নিরপেক্ষ ৫০ পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। এটি ৫০-এর ওপরে থাকলে সেটাকে প্রবৃদ্ধি, আর নিচে থাকলে সংকোচন বলা হয়।
আইএইচএস মার্কিটের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী পরিচালক পলিয়ানা দে লিমা বলেন, কোভিড সংক্রমণের কারণে সেবা খাতে নতুন কর্মসংস্থানে ভাটা পড়ে এবং উৎপাদন কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। এতে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
পলিয়ানা দে লিমা আরও বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে চলতি ২০২১ সালের প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জ অব্যাহত থাকবে। এই অবস্থায় আমরা একটি টেকসই পুনরুদ্ধারের অপেক্ষায় আছি। আশা করা হচ্ছে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বা টিকা পাওয়া গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয় ভারতে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ভারত গত রোববার দুটি করোনভাইরাস ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে। কিন্তু ১৩০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে যে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে, সেটাই উদ্বেগের।
নিক্কেই/আইএইচএস মার্কিট সার্ভিসেসের জরিপমতে, শিল্প খাতে উৎপাদন বাড়লেও আগামী ১২ মাসে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে আশাবাদ কম। কারণ, ব্যবসায়ীরা মনে করেন, করোনার অনিশ্চয়তা কেটে যায়নি, ভারতীয় মুদ্রা রুপির বিনিময় হার কমেছে, মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থাৎ কম্পোজিট বা সমন্বিত পিএমআই সূচক কমে ৫৪ দশমিক ৯ পয়েন্টে নেমেছ, যা তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এদিকে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, সার্বিক অর্থনীতি আবার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ফিরেছে। ছয় মাস ধরেই এই প্রবণতা চলছে। লকডাউনসংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় অর্থনীতি গতি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী ২০২০ সালের জুন থেকে ব্যাপক হারে কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই হয়ে ওঠার আশাবাদ জেগেছে।
‘ডিসেম্বর মাসে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্যাকসিনেশন বা টিকা আসছে এমন খবরে বিশ্বব্যাপীই অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হয়েছে। কার্যকর উপায়ে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার পাশাপাশি লকডাউন শিথিল করায় ভারতের অর্থনীতি আবার ‘ভি শেপ’ বা ‘ভি আকার’ ধারণ করে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
ব্যাপক পতনের পর অর্থনীতি যখন পুনরায় দ্রুতগতিতে ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে এবং টেকসই হওয়ার ইঙ্গিত দেয় তখন সেটাকে ভি শেপ পুনরুদ্ধার বলে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও ভারতের অর্থনীতি সেই আকারই ধারণ করেছে।
সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।