রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে জার্মানি মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত শুক্রবার জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ–ও বলেছে, মন্দার কবলে পড়লে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানির অর্থনীতি করোনাভাইরাসের প্রথম বছরের তুলনায় কম সংকুচিত হবে। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথে হাঁটছে। আর সেটি হলে এ বছর জার্মানির ১৬৫ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ৫০০ কোটি ইউরোর সমপরিমাণ উৎপাদন কমতে পারে বলে মনে করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ২০২১ সালের তুলনায় জার্মানির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে এ–ও বলা হয়েছে, আগামী বছরও জার্মানির শিল্প-কারখানাগুলোকে গ্যাসের স্বল্পতায় ভুগতে হতে পারে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময়ের জন্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে। ইউক্রেনে হামলার আগে জার্মানির গ্যাসের চাহিদার ৫৫ শতাংশই মেটানো হতো রাশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। এসব গ্যাস ইস্পাত, রাসায়নিকসহ ভারী শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়তে পারে। কারণ, রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প ব্যবস্থা করা সত্যিই কঠিন। করোনার প্রথম বছরে দেশটির অর্থনীতি বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। এর ফলে জার্মানির ১০ বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তীব্র মন্দার মধ্যে পড়ে। সেই মন্দা কাটিয়ে ২০২১ সালে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। গত বছর দেশটির অর্থনীতি ২ দশমিক ৯ শতাংশ হারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
গার্ডিয়ানের এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমনকি রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে ইইউ। তবে জার্মানির উদ্বেগের কারণে এখন ইইউ রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। কারণ তারা মনে করছে, নিজস্ব ভূখণ্ডে মন্দা দেখা দিলে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হেব্যাককে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ অবস্থা চলতে থাকলে পেট্রল ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়বে। তাহলে এ দেশের যেসব গরিব মানুষ শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ঘর গরম করে, তারা সেটি করতে পারবে না। এ ছাড়া দেশজুড়ে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ভয়াবহভাবে বেড়ে যেতে পারে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, জার্মান সরকার দেশটির শিল্পোদ্যোক্তাদের চাপকেই রাজনৈতিকভাবে বেশি ভয় পাচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরপরই ইইউসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ যুদ্ধ এখনো চলমান। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন রাশিয়ার পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়েছে।