তেলের বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ। এই ভান্ডার থেকে তেল ছেড়ে তারা বাজারে তেলের দাম কমাতে পারে। সময়-সময় তারা সেটা করেও থাকে।
এবার যুক্তরাষ্ট্র সেই ভান্ডার থেকে ১৮ কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়বে, এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় আজ বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ১০৭ ডলার। এক দিনেই দাম কমেছে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৭৪ সালের পর এবারই তারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জ্বালানি তেল বাজারে ছাড়বে।
কয়েক মাস ধরেই বাজারে এই খবর চাউর হয়ে গিয়েছিল যে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়। এমনকি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর আজ তা কমে ১০৭ ডলারে নেমে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বেলা দেড়টায় দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে হোয়াইট হাউস সূত্রে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা না হলেও তেল ও গ্যাসের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে তিনি ঘোষণা দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে আজ ওপেক ও রাশিয়া বৈঠকে বসবে বলেও জানা গেছে। তবে তারা তেলের দাম কমাতে এখনই বাজারে খুব বেশি তেল ছাড়বে না বলেই জানা গেছে। আগের পরিকল্পনামাফিক তারা ধাপে ধাপে বাজারে তেল ছাড়বে।
২০২০ সালের কোভিড মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানির তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেওয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে। গত বছরের অক্টোবর মাসে সারা পৃথিবী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করলে জ্বালানির চাহিদা বাড়তে শুরু করে। এর সঙ্গে দামও বাড়তে শুরু করে।
এর আগে গত বছরের ২৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র পেট্রোলিয়াম ভান্ডার থেকে পাঁচ কোটি ব্যারেল তেল ছাড়ে। এতে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধারায় কিছুটা ছেদ পড়ে। এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ ওপেক তেল সরবরাহ বৃদ্ধি করলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
গত অক্টোবরে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে। ফলে পরিবহনভাড়া বাড়ে ২৭ শতাংশ। এখন বিশ্ববাজারে দাম কমলে বাংলাদেশ কী করে, তা–ই দেখার বিষয়।
দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সবকিছুর দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষেরা।