ক্যারিয়ারের শীর্ষে বিশ্বের সর্বাধিক বেতনের খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। সারা জীবন আয়ও করেছেন বিপুল। তবে নানা বিতর্কে হারিয়েছেনও অনেক। নেশায় বিপথে গেছেন, আইনি ঝামেলা কখনোই তাঁর পিছু ছাড়েনি। আর্থিক ঝামেলায়ও পড়েছেন। শেষ সময়ে খুব বেশি সম্পদ হাতে ছিল না ফুটবলের এই কিংবদন্তির।
গতকাল বুধবার ৬০ বছর বয়সে মারা গেছেন ফুটবল জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন। দেশের হয়ে করেছেন বিশ্বকাপ জয়। পেশাদার ক্যারিয়ারে ট্রান্সফার ফির বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ঝড় তুলেছেন দুনিয়ায়। আয় করেছেন লাখ লাখ ডলার। প্রথমে বার্সেলোনা পরে নাপোলিতে যোগ দিয়ে আয় করছেন দেদার। একসময় বিশ্বের সর্বাধিক পারিশ্রমিকের খেলোয়াড় ছিলেন। অর্থ সব সময়ই তাঁর পিছু ছুটেছে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস জানিয়েছে, নাপোলির সঙ্গে চুক্তির সময় ৩০ লাখ মার্কিন ডলার বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের বাণিজ্যিক দূত হয়ে ১ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। তাঁর ওই ১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের মূল্য এখনকার সময়ে প্রায় দ্বিগুণ, ২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সমান। জীবনের বিভিন্ন সময় ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে আয় করেছেন বিপুল অঙ্কের অর্থ। ২০১০ সালে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেষ দিকে মেক্সিকোর একটি ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেখানে ১১ মাস ছিলেন। প্রতি মাসে বেতন নিতেন ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। অবশ্য ম্যারাডোনা যে মাপের খেলোয়াড় ছিলেন সে তুলনায় ১৫ হাজার ডলার কিছুই না। একসময় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড় কোচ হিসেবে মাত্র ১৫ হাজার ডলার বেতন পাচ্ছেন, এই একটি ব্যাপারই ম্যারাডোনার উত্থান-পতনের গোটা জীবনটাকে সবার সামনে তুলে ধরে। মানুষটি বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। সেটা তাঁর খামখেয়ালি জীবনেরই প্রতিফলন।
এক্সপ্রেস ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর সময় এই ফুটবল কিংবদন্তির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৮৫ লাখ টাকার মতো। ভাবা যায়!
সারা জীবনই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি মানুষটির। কর ফাঁকির অভিযোগও আছে বিস্তর।
ইতালির আদালত ২০০৫ সালে কর ফাঁকির জরিমানা হিসেবে ৩ কোটি ৭২ লাখ ইউরো দিতে আদেশ দেন ম্যারাডোনাকে। ২০১২ সালের নভেম্বরে ইতালির আদালত জানান, আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্তে কিছু ভুল ছিল। আদালতের দেওয়া নির্দেশে নতুন করে তদন্ত চলছে। ২০০৯ সালে ম্যারাডোনা ইতালিতে গেলে কর আদায়ের জন্য তাঁর শখের কানের দুল খুলে নেয় পুলিশ। এসব ঘটনার জন্য সারা জীবন ইতালীয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করে গেছেন ম্যারাডোনা। ২০১৬ সালে ইতালীয় এক পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা বলেন, করের জরিমানা ২০০৩ সালে দিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি সত্ত্বেও ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে জানায়, তাঁর জরিমানার এখনো কয়েক মিলিয়ন ডলার বাকি রয়েছে। আইনি ঝামেলার পাশাপাশি মাদকও পিছু ছাড়েনি এই তারকাকে। মাদকের ওপর ম্যারাডোনার নির্ভরতা কেবল তাঁর স্বাস্থ্যের ওপরই প্রভাব ফেলেনি, তাঁর ক্যারিয়ার এবং আর্থিক অবস্থানকেও প্রভাবিত করেছিল।