ভারতে গাড়ি বিক্রির কমার হার অব্যাহত আছে। উৎসবের মৌসুমের আগে অবস্থা কিছুটা বদলাবে বলে আশা করেছিল দেশটির গাড়িশিল্প। কিন্তু দেশটির গাড়ি কোম্পানিগুলোর সংগঠন সিয়াম সেপ্টেম্বরের পাইকারি বিক্রির যে তথ্য শুক্রবার প্রকাশ করেছে, তাতে আবারও গাড়ি বিক্রি কমার চিত্র পাওয়া গেছে। এ নিয়ে টানা ১১ মাস কমেছে যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি। সব ধরনের গাড়ি মিলিয়েও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।
সিয়ামের তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বর মাসে সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার। আগের বছর সেপ্টেম্বরে তা ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার। অর্থাৎ এক বছর আগের তুলনায় বিক্রি কমেছে ২৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। একইভাবে অর্থবর্ষের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) বিক্রি কমেছে ২৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল ও বাণিজ্যিক গাড়িসংক্রান্ত তথ্যও দেশটির গাড়িশিল্পকে ভরসা দিচ্ছে না। মোটরসাইকেলের বিক্রি কমেছে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি কমেছে ৩৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০০৯ সালের জানুয়ারির পর ভারতের গাড়িশিল্পের এতটা দুরবস্থা কখনো দেখা যায়নি।
সিয়ামের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরার মতে, অর্থনীতির গতি কমার পাশাপাশি বন্যার ফলে উত্তর প্রদেশ, বিহার ও মহারাষ্ট্রে গাড়ি বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। রাজ্য সরকারগুলোর বাস কেনা কমানো, বাজারে কম চাহিদার ফলে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন কমার বিরূপ প্রভাব মূলত পড়েছে বাণিজ্যিক গাড়ির বাজারে। সিয়ামের বক্তব্য, চাহিদা হ্রাসের ফলে শোরুমগুলোতে বহু অবিক্রীত গাড়ি পড়ে আছে। সেগুলো বিক্রি হওয়ার আগে তারা গাড়ি কিনতে চাইছে না। সেই সঙ্গে জিএসটি না কমার প্রভাব তো আছেই।
এত কিছু সত্ত্বেও বছরের দ্বিতীয়ার্ধ নিয়ে আশার কথাই শোনাচ্ছে ভারতের গাড়িশিল্প। তাদের বক্তব্য, বন্যায় গাড়ি বিক্রি ধাক্কা খেলেও পরের দিকে ভালো বর্ষার প্রভাবে চাষ ভালো হয়েছে। ফলে গ্রামের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। নবরাত্রিকে ঘিরে গত ১০-১২ দিনে গাড়ি কেনায় উৎসাহ দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। উৎসবের মৌসুমের ছাড় কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁরা। গাড়ি বাতিলের নীতি এবং অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে কেন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফলও ভবিষ্যতে গাড়িশিল্প পাবে বলে ব্যাখ্যা সিয়ামের।
এখানেই শেষ নয়, গাড়ি খাতের পাশাপাশি চলতি বছরের আগস্টে শিল্পোৎপাদন গত বছর আগস্টের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ কম হয়েছে, যা সাত বছরে সবচেয়ে খারাপ। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতের থুবড়ে পড়া বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগের অভাবে এই খাতের সংকোচন হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ কর্মসংস্থান বাড়াতে এই ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধিই জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন কমেছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এতে চাহিদার সংকটই স্পষ্ট হয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। সরাসরি কমেছে বিদ্যুৎ, পরিকাঠামো ও নির্মাণ পণ্যের উৎপাদন। খননের প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি মার খাওয়া থেকেই শিল্পের দুরবস্থা স্পষ্ট। পণ্য উৎপাদনই না হলে কাঁচামালের জোগান বা পণ্য সরবরাহে গাড়ি লাগবে কী করে। চাহিদা বাড়াতে নগদ জোগান বাড়াতে হবে বলেই তাঁরা মনে করেন।