করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ অমিক্রনের প্রভাব কেমন হয়, সেদিকেই এখন নজর বিনিয়োগকারীদের। তাঁরা শেয়ার কেনাবেচায় মোটামুটি সতর্কতা অবলম্বন করে চলছেন। ফলে ক্রিসমাস ও সাপ্তাহিক ছুটির প্রাক্কালে বিশ্বের অধিকাংশ শেয়ারবাজারে সূচক বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ লেনদেন দিবস শুক্রবার লন্ডনের এফটিএসই সূচক শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
তবে জার্মানি, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের শেয়ারবাজার ক্রিসমাস তথা বড় বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে শুক্রবার বন্ধ ছিল। আগের দিন বৃহস্পতিবার জার্মানির ড্যাক্স সূচক ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ডাউজোন্স শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ, নাসড্যাক শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ ও এসঅ্যান্ডপি শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে।
এশিয়ায় ভারতের সেনসেক্স শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ ও জাপানের নিক্কি ২২৫ সূচক শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কমেছে। আর হংকংয়ের হেংসেং সূচক শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যের নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে মানুষের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি করোনার অন্যান্য ধরনের চেয়ে ৮০ শতাংশ কম। এটি আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণেও হয়ে থাকতে পারে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অন্যদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে সব দেশে একই অবস্থা না–ও হতে পারে।
স্কটল্যান্ডে পৃথক আরেক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের তুলনায় অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার দুই-তৃতীয়াংশ কম। যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি সমীক্ষাগুলোর ফলাফল পর্যালোচনা করে গত বৃহস্পতিবার বলেছে, একজন অমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কম।
এদিকে অমিক্রনের ভয়াবহতা কম—এমন খবরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গত সপ্তাহে গড়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। এই সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে আগাম কেনাবেচায় প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম গত এক মাসে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৭৩ দশমিক ৭৯ মার্কিন ডলারে উঠেছে, যা গত ২৪ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ইউরোপে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ৭৬ দশমিক ৮৫ ডলারে উঠেছে। এটি গত ২৫ নভেম্বরের পর ব্রেন্ট ক্রুডের সর্বোচ্চ দর।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনটি প্রতিরোধে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বা টিকার বুস্টার ডোজের কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়াটা উৎসাহব্যঞ্জক। যে কারণে তেলের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে যে ডেলটা ধরনের তুলনায় অমিক্রন বেশি সংক্রমনশীল হলেও কম গুরুতর। এই খবরও বৈশ্বিক তেলের বাজারে প্রভাব ফেলেছে।
ওন্ডার নামক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেছেন, অমিক্রন প্রতিরোধে কোভিড ভ্যাকসিন বেশ কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় তেলের বাজার স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
সূত্র: বিবিসি ও মার্কেটওয়াচ