বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ে

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ের পারিবারিক ছবি। বর আনন্দ পিরামল ও কনে ইশা আম্বানির সঙ্গে আছেন কনের বাবা ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি, তাঁর স্ত্রী নিতা আম্বানি এবং বরের বাবা ভারতীয় ধনকুবের অজয় পিরামল ও তাঁর স্ত্রী স্বতী পিরামল। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে তোলা ছবি। এএফপি
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ের পারিবারিক ছবি। বর আনন্দ পিরামল ও কনে ইশা আম্বানির সঙ্গে আছেন কনের বাবা ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি, তাঁর স্ত্রী নিতা আম্বানি এবং বরের বাবা ভারতীয় ধনকুবের অজয় পিরামল ও তাঁর স্ত্রী স্বতী পিরামল। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে তোলা ছবি।  এএফপি

বিয়ে সামাজিক রীতি হলেও আনন্দের বড় উপলক্ষ এখন। এই বিয়ের জন্যই কেউ ভাড়া করেন দ্বীপরাজ্য। আবার কেউবা উড়োজাহাজ। তবে বিয়ের এ জাঁকজমক আয়োজন নির্ভর করে সামর্থ্যের ওপর। যার যেমন সামর্থ্য, আয়োজনটি ততটাই জমকালো। বিশ্বের সবচেয়ে দামি বিয়ের প্রসঙ্গ এলে স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে সেই বিয়েটি ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র বা নিদেনপক্ষে চীনে হয়ে থাকবে। কিন্তু দিন কয়েক আগে এযাবৎকালে বিশ্বের সবচেয়ে দামি বিয়েটি হয়ে গেল পাশের দেশ ভারতে। এ বিয়েকে ঘিরে পাত্র–পাত্রী থেকে শুরু করে উভয় পরিবার ও পাড়া–পড়শির ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। কারণ, এ বিয়েতে আয়োজনের কোনো কমতি ছিল না। এ বিয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসেছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন, গায়িকা বিয়ন্সেসহ অনেকে। ছিলেন বলিউডের মহাতারকারাও।

যাঁর বিয়ে নিয়ে এতসব আয়োজন, তিনি হলেন মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস–এর তালিকা অনুযায়ী, ভারতের সেরা ধনী মুকেশ ধীরুভাই আম্বানির মেয়ে ইশা আম্বানি। মুকেশ আম্বানির মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে দেশটির আরেক ধনকুবের অজয় পিরামলের ছেলে আনন্দ পিরামলের। এখন পর্যন্ত এ বিয়েই ইতিহাসের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যয়বহুল বিয়ে হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ৪ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারের মালিক মুকেশ আম্বানি অবশ্য সম্পদের সামান্যই খরচ করেছেন এই বিয়েতে, মাত্র ১০ কোটি ডলার। ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৪ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বিয়েতে খরচ প্রায় হাজার কোটি টাকা। এটিই এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বিয়ে।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি বিয়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারতের ইস্পাতশিল্পের ধনকুবের লক্ষ্মী মিত্তালের মেয়ে বানিশা মিত্তাল ও অমিত ভাটিয়ার বিয়ে। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত এই বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বর অমিত ভাটিয়া সোর্ডফিশ ইনভেস্টমেন্টের মালিক।

দামি বিয়ের তৃতীয় স্থানে আছে ১৯৮১ সালে ডায়ানা ও ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লসের বিয়ে। সেই সময় এই বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হলে আজকের হিসাবে এই বিয়ের খরচ দাঁড়াবে ১১ কোটি ডলার।

বিশ্বের দামি বিয়ের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে ডায়ানা ও চার্লসের দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারির বিয়ে। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এরপর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রিন্স হ্যারি ও সাবেক হলিউড অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের বিয়েতে খরচ হয় ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।

২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের ফুটবল খেলোয়াড় ওয়েন রুনি ও কোলিন রুনির বিয়েতে খরচ হয় ৮০ লাখ ডলার। এটি বিশ্বের ষষ্ঠ ব্যয়বহুল বিয়ে। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে রুনি বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তবে তাঁর স্ত্রী কোলিন ইংল্যান্ডের সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবার থেকে উঠে আসা এক নারী।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মেয়ে চেলসি ক্লিনটন গোল্ডম্যান স্যাকসের কর্মকর্তা মার্ক মেজভিনস্কিকে বিয়ে করেন ২০১০ সালে। এই বিয়েতে খরচ হয় ৫০ লাখ ডলার। এটি বিশ্বের সপ্তম ব্যয়বহুল বিয়ে।

মার্কিন গায়িকা জুডি গারল্যান্ডের মেয়ে ও ব্রডওয়ে তারকা লিজা মিনেলি ও ডেভিড জেস্টের বিয়েতে খরচ হয় ৩৫ লাখ ডলার। ডেভিড একজন সংগীত প্রযোজক। এই বিয়েতে শোবিজ জগতের অনেক তারকা এসেছিলেন। মাইকেল জ্যাকসন থেকে শুরু করে এলিজাবেথ টেইলর পর্যন্ত এই বিয়েতে এসেছিলেন। বিশ্বের অষ্টম ব্যয়বহুল বিয়ে ছিল এটি।

নবম স্থানে আছে ইংরেজ গায়ক পল ম্যাককার্টনি ও সাবেক মডেল হিদার মিলসের বিয়ে। ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত এই বিয়েতে ৩০ লাখ ডলার ব্যয় হয়। ম্যাককার্টনি ইতিহাসের অন্যতম সফল গায়ক ও গীতিকার। তাঁদের বিয়েটি ভারতীয় রীতিতে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় নিরামিষ ও খাবার পরিবেশন করা হয় এতে।

দশম স্থানে আছে মার্কিন অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলর ও অভিনেতা ল্যারি ফোরটেনস্কির বিয়ে। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত এই বিয়েতে খরচ হয়েছিল ২৫ লাখ ডলার। এই বিয়েতেও প্রচুর তারকার সমাগম হয়েছিল। বিয়েতে কনের ধর্মপিতা ছিলেন গায়ক মাইকেল জ্যাকসন। এ ছাড়া বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন লিজা মেনেলি, এডি মারফি ও ন্যান্সি রিগ্যান। যদিও বিয়েটি টিকে ছিল মাত্র পাঁচ বছর। এ ছাড়া ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত ভারতীয় ব্যবসায়ী অরুণ নায়ার ও সুপার মডেল এলিজাবেথ হারলের বিয়েতেও ২৫ লাখ ডলার ব্যয় হয়।

তবে আয়োজনের বৈচিত্র্য ও ব্যয়ের নিরিখে মুকেশ আম্বানির মেয়ে ইশা আম্বানির বিয়ে অন্য সব বিয়েকে ছাড়িয়ে গেছে, যদিও এসব ব্যয়বহুল বিয়ে নিয়ে অনেক মানুষেরই আপত্তি আছে। কেউ কেউ বলেন, এটি নিছক অর্থ অপচয়। আবার অনেকে বলেন, এটাই পুঁজিবাদ; যেখানে বৈষম্যই শেষ কথা। কেউ চাইলে নিজের টাকা ইচ্ছামতো ব্যয় করতেই পারেন। কিন্তু যে পৃথিবীতে এখনো বহু মানুষ না খেয়ে বা আধপেটা খেয়ে ঘুমাতে যায়, সেখানে এ রকম ব্যয়বহুল বিয়ের যৌক্তিকতা কী। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই বিতর্ক সম্ভবত শেষ হওয়ার নয়।