বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, গত অক্টোবর পর্যন্ত টানা তৃতীয় মাসের মতো খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে খাদ্যপণ্যের দাম গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ। বিশ্ব সংস্থাটি গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়।
এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরবরাহে ঘাটতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চ মূল্য, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ জলবায়ু পরিবর্তনকেও এ জন্য দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমছে।
অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারদর পর্যবেক্ষণ করে এফএও। এর ভিত্তিতে করা তাদের ‘খাদ্য মূল্যসূচক’ অক্টোবরে ছিল গড়ে ১৩৩ দশমিক ২ পয়েন্ট, যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ১২৯ দশমিক ২। সংস্থাটি বলছে, ২০১১ সালের জুলাইয়ের পর এসব পণ্যের দাম আর এতটা বাড়েনি।
এফএও বলছে, বিশ্বব্যাপী সব ধরনের খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। অক্টোবরে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ, যা নতুন রেকর্ড গড়েছে। আর খাদ্যশস্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি।
সার্বিকভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে গমের। গত এক বছরে এই খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। কানাডা, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশগুলোয় গমের ফলন কমেছে। ফলে তারা রপ্তানিতে লাগাম টেনেছে। বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়ছে।
এফএও বলছে, বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিকসংকটের কারণে বেড়েছে পাম তেলের দাম। যথাসময়ে জাহাজের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করতে না পারায় দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এসব পণ্যের দাম প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিজনেস স্কুলের কৃষি-বাণিজ্যবিষয়ক গবেষক পিটার বাট বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে আমরা যে পরিস্থিতির মুখে পড়েছি, তার জন্য যে কেউ জলবায়ু পরিবর্তনকে উৎপাদন কমার জন্য দায়ী করতে পারেন।’
দেশে দেশে এখন খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াসহ সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে সর্বশেষ অক্টোবর মাসের প্রতি সপ্তাহেই খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে শেষ সপ্তাহে খাদ্যপণ্যের দাম ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, শূকরের মাংস ১০ দশমিক ৬ শতাংশ ও মুরগির ডিম ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ অবস্থায় চীনা সরকার প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, সিএনবিসি