ভোজ্যতেলের বিশ্ববাজারে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববাজারে আজ যে দরের রেকর্ড হচ্ছে, কাল তা রেকর্ডের পাতা থেকে মুছে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজার থেকে বুকিং করতে বেগ পেতে হচ্ছে এ দেশের আমদানিকারকদের।
ইন্দোনেশিয়া পামতেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের দিন গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে সব রেকর্ড ভেঙেছে সয়াবিনের দর। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য লেনদেনের বাজার তথা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেড বা সিবিওটিতে ওই দিন প্রতি টন সয়াবিন তেল লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ মার্কিন ডলারে। সেই হিসাবে লিটারপ্রতি দর দাঁড়ায় ১৫৭ টাকা। মে মাসে সরবরাহ হবে, এমন চুক্তিতে এই দরে লেনদেন চলছিল বিশ্ববাজারে। ইন্দোনেশিয়ার পামতেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর থেকে সয়াবিনের দাম টনপ্রতি ২০০ ডলার বেড়েছে।
দাম বাড়লেও বিশ্ববাজারে ব্যবসায়ীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞা বেশি দিন থাকবে না। তাতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও পণ্যটির দামে প্রভাব পড়ে। গুজবে গত সোমবার প্রতি টন সয়াবিন তেলের দর ১৭৪ ডলার কমে নেমে আসে ১ হাজার ৮২৩ ডলারে। অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার সিবিওটিতে সয়াবিনের দাম সামান্য বেড়ে ১ হাজার ৮৫৮ ডলারে ওঠে।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক আসির হক প্রথম আলোকে বলেন, ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করায় বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ভোজ্যতেলের বাজারে এত অস্থিরতা বিরাজ করছে যে কখন কী হয়, তা ধারণা করা যাচ্ছে না।
ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয় করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরুর পর থেকে। আর সেই দামের পালে নতুন করে হাওয়া দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয় করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরুর পর থেকে। আর সেই দামের পালে নতুন করে হাওয়া দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ওই অঞ্চল থেকে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাপ পড়ে সয়াবিন ও পামতেলের ওপর। তাতে দাম বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে খরার কারণে প্যারাগুয়ে, ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চল এবং আর্জেন্টিনার উত্তর–পূর্বাঞ্চলে সয়াবিন বীজের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রভাবও যুক্ত হয় দামে। এর মধ্যে গত ২২ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া নিজেদের দেশের বাজারে পামতেলের দাম সহনীয় রাখতে রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে আবারও দাম বেড়ে রেকর্ড হয়।
দেশে প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টন সয়াবিন তেল অপরিশোধিত আকারে আমদানি হয়। এ ছাড়া সয়াবিন বীজ মাড়াই করেও সয়াবিন তেল উৎপাদন করে তিনটি প্রতিষ্ঠান।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাবে, দেশে প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টন সয়াবিন তেল অপরিশোধিত আকারে আমদানি হয়। এ ছাড়া সয়াবিন বীজ মাড়াই করেও সয়াবিন তেল উৎপাদন করে তিনটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রতি মাসে ২৮ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন করে। সব মিলিয়ে মাসে এক লাখ টনের কাছাকাছি সয়াবিন তেলের চাহিদা রয়েছে দেশে।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ভোজ্যতেল আমদানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে এত অনিশ্চয়তা আগে কখনো হয়নি।
তবে বিশ্ববাজারে দামের অস্থিরতা থাকায় দুই মাস ধরে ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। আবার ঈদের পর দাম বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করবে সরকার—এমন ধারণায় মজুত করছেন অনেকেই। এতে ঈদের আগে থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ভোজ্যতেল আমদানিকারক টিকে, সিটি ও মেঘনা গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে এত অনিশ্চয়তা আগে কখনো হয়নি। তাই বিশ্ববাজার থেকে সয়াবিন বা পামতেল আমদানির বুকিং দেওয়ার আগে বেশ ভেবেচিন্তে দিতে হচ্ছে।