বিশ্ব অর্থনীতি

পুনরুদ্ধার কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি হবে

  • অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ইংরেজি ইউ আকৃতির বা কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি হবে। এরপর অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে।

  • চীনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। দেশটির ২১ শতাংশ প্রধান নির্বাহী ভি আকৃতির বা দ্রুতগতির পুনরুদ্ধার আশা করছেন।

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের ২৩ শতাংশ প্রধান নির্বাহী দ্বিতীয় দফা সংকোচনের আশঙ্কা করছেন।

বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীন ছাড়া বিশ্বের সব বড় অর্থনীতিই সংকুচিত হয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকেও অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন আশা নেই। অর্থনীতিবিদদের মতো প্রধান নির্বাহীরাও মনে করছেন, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কনফারেন্স বোর্ড সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ প্রধান নির্বাহীরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ইংরেজি ইউ আকৃতির বা কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি হবে। এর অর্থ হচ্ছে, কয়েকটি ত্রৈমাসিক বা বড়জোর দুই বছর প্রবৃদ্ধির রেখাচিত্র নিম্নমুখী থাকবে। এরপর অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে।

তবে অর্থনীতি কত দ্রুত আগের জায়গায় ফিরে যাবে—এই প্রশ্নের উত্তরে একেক অঞ্চলের প্রধান নির্বাহীরা একেক রকম কথা বলেছেন। ইউরোপের প্রধান নির্বাহীরা অন্যান্য অঞ্চলের নির্বাহীদের চেয়ে কিছুটা বেশি হতাশ। বৈশ্বিকভাবে যেখানে ৪২ শতাংশ প্রধান নির্বাহী মনে করেন, পুনরুদ্ধার ইউ আকৃতির হবে, সেখানে ইউরোপের ক্ষেত্রে তা ৫৫ শতাংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের ২৩ শতাংশ প্রধান নির্বাহী দ্বিতীয় দফা সংকোচনের আশঙ্কা করছেন। অর্থাৎ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ইংরেজি ডব্লিউ আকৃতির হবে। দুই দেশেই সংকোচনের হার মন্দ নয়। তবে রেস্তোরাঁয় বেকারত্বের হারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়—চূড়ান্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে রেস্তোরাঁ বেকারত্বের হার ছিল ১৫ শতাংশ, সেখানে জাপানে তা ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

চীনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। দেশটির ২১ শতাংশ প্রধান নির্বাহী ভি আকৃতির বা দ্রুতগতির পুনরুদ্ধার আশা করছেন। সবচেয়ে আশাবাদী চিত্র এটি। এর কারণও আছে, বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে সংকোচনের হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

তবে বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। ২০২১ সালজুড়ে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

ব্রিটিশ তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মারকিটের প্রধান অর্থনীতিবিদ নরিম্যান বেহরাভেশ মনে করেন, টিকার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। টিকা যত তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে এবং যত দ্রুত বিতরণ করা যাবে, প্রবৃদ্ধির চাকাও তত দ্রুত ঘোরার সম্ভাবনা। তবে ২০২১ সালের দ্বিতীয় ভাগের আগে সেই সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তিনি। টিকা হয়তো দ্রুত তৈরি হয়ে যাবে, কিন্তু ব্যাপক হারে জনগণের মধ্যে বিতরণের জন্য অনেকটা সময় লেগে যাবে।

উৎপাদনশীল খাত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে—ভি আকৃতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায়। কিন্তু সেবা খাতে চলছে দীর্ঘমেয়াদি ইউ আকৃতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া, বিশেষ করে বিমান পরিবহন, ভ্রমণ ও বিনোদন খাতে।

জরিপে দেখা গেছে, উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান নির্বাহীরা সবচেয়ে হতাশার কথা শুনিয়েছেন। তেলের দাম ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কম—স্বাভাবিকভাবে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোও দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে। এই অঞ্চলের ৫৭ শতাংশ প্রধান নির্বাহী মনে করেন, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এল আকৃতির হবে। অর্থাৎ দ্রুত পতনের পর ধীরগতির দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার।

প্রধান নির্বাহীদের প্রতিক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও একটি ব্যাপারে অভিন্নতা দেখা গেছে। সেটা হলো, তারা সবাই কমবেশি দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধারের কথা বলেছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক স্বাভাবিক হবে। তাতে অর্থনীতি গতি পাবে। কিন্তু অনিশ্চয়তা থেকে মানুষ শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছে না। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যেতে আরও সময় লাগবে।

জরিপে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, জাপান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের ৬০৬ জন প্রধান নির্বাহী অংশ নেন।