ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন সব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্রদেশগুলো। ফলে আজ সোমবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দরপতনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা জানান, রাশিয়াসহ বিশ্বের সব বড় বাজারে রুবলের দাম কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল রাশিয়ান আর্থিকব্যবস্থা, বিশেষ করে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম সংকুচিত করা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ছিল আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে সুইফট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। এর ফলে ব্যাংকগুলোর আর্ন্তজাতিক অর্থ লেনদেন কার্যক্রম অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকালে একটি এটিএম বুথের সামনে বেশ কিছু রাশিয়ানের দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আজ বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রার জন্য ভিড় আরও বাড়বে।
রুবলের মান যে কমেছে, তার লক্ষণও ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাশিয়ার টিংকফ ব্যাংক প্রতি ডলার কিনেছে ৮৯ রুবলের বিনিময়ে এবং বিক্রি করেছে ১৫৪ রুবলে। তার মানে ডলারের বিপরীতে মান হারাচ্ছে রুবল।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরেও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থাগুলো নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির কারণে রাশিয়ায় তাদের অফিস কমাতে বা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেছে। যেসব কোম্পানি জনপ্রিয় পণ্য বিক্রি করে, তারাও রাশিয়ার বাজারে তাদের কার্যক্রম সীমিত করছে। যেমন মার্সিডিজ বেঞ্জ, অডি, জেনারেল মোটরস এবং জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারসহ গাড়ি নির্মাতারা রাশিয়ায় পণ্যের চালান বন্ধ করেছে। এ ছাড়া আইফোন ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির দোকানগুলোও বলেছে যে তারা নতুন কোনো চালান পাচ্ছে না।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থাকলেও রাশিয়ার এসবার, ভিটিবি ব্যাংকসহ বড় ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে। তারা জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোতে থাকা রুবলের আমানত তারা ব্যবহার করতে এবং ডলার ও ইউরোর মতো বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিময়ও করতে পারছে।
তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়েছে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি)। আজ সকালের এক বিবৃতিতে ইসিবি বলেছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে এসবার ব্যাংকের ইউরোপীয় শাখা এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলো উল্লেখযোগ্য আমানত বহিঃপ্রবাহের (ডিপোজিট আউট ফ্লো) মুখে পড়েছে। এর ফলে ব্যাংকটির তারল্য অবস্থান কমে যাবে। আর এই অবস্থান পুনরুদ্ধারের বাস্তবসম্মত কোনো সুযোগ এই মুহুর্তে তাদের সামনে নেই।