কসমেটিকসের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রেভলন দেউলিয়া হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে। কোম্পানিটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা দায়ের করেছে। সংস্থাটি বলছে, বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় কাঁচামালের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। এ কারণে ৯০ বছরের পুরোনো এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে ধুঁকছে।
পাশাপাশি শ্রমিক–সংকটেও ভুগছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় পণ্য বিক্রির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে তাই প্রায় শতবর্ষী এ কসমেটিকস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি এখন নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার পথ বেছে নিয়েছে। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সাড়ে ৫৭ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার আশা করছে। এদিকে দেউলিয়া হওয়ার আবেদনের খবরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৩ শতাংশ কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা দেউলিয়া ঘোষণার আবেদনে কোম্পানিটি জানিয়েছে, সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে কসমেটিকস তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান সংগ্রহের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় কসমেটিকসের উপাদান সরবরাহকারীরা অগ্রিম অর্থ প্রদানের দাবি করছেন। রেভলনের প্রধান পুনর্গঠন কর্মকর্তা রবার্ট কারসো আদালতের আবেদনে বলেন, কোম্পানিটি এখন কসমেটিকস তৈরির উপাদান–সংকটে ভুগছে। তিনি বলেন, রেভলনের লিপস্টিকের একটি টিউব তৈরিতে ৩৫ থেকে ৪০ ধরনের কাঁচামালের দরকার হয়। এসব উপাদানের ওপরই নির্ভর করে লিপস্টিকের বাজার সরবরাহ।
রেভলনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, কয়েক বছর ধরে বাজারে নতুন আসা কোম্পানিগুলোর কারণে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে তারা। বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত বেশ কয়েকজন তারকার কসমেটিকসের নতুন ব্র্যান্ড বাজারে আসার পর এ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়েছে তারা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাইলি জেনারের কাইলি কসমেটিকস, মার্কিন অভিনেত্রী ও গায়িকা রিয়ানার ফেন্টি বিউটি।
যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়া সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, রেভলন তার উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধের একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। রেভলনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী দেব্রা পেরেলম্যান বলেন, ‘আমরা আশা করছি গত কয়েক দশকে আমরা আমাদের ভোক্তাদের যেসব আইকনিক পণ্য সরবরাহ করে আসছি, সেসব পণ্য সরবরাহের একটি পথের সন্ধান দেবেন আদালত।’
এদিকে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, কোম্পানিটি নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তাদের শেয়ার তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ১৯৩২ সালে নেইলপলিশ বিক্রির মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু হয় রেভলনের। ৫০-এর দশকে এসে কোম্পানিটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড পেরেলম্যান কোম্পানিটি কিনে নেন। রেভলন এখন বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশে তাদের পণ্য বিক্রি করে।
এ বছরের শুরুতে রেভলন জানিয়েছিল, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, সরবরাহব্যবস্থার সংকটসহ নানা কারণে কোম্পানিটি তারল্য–সংকটে পড়েছে। গত মার্চ শেষে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার।