বিশ্ববাজারে কমছে জ্বালানি তেলের দাম। এতে ভারতের বাজারেও পেট্রল-ডিজেলের দাম কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে গতকাল শনিবার থেকে পেট্রল-ডিজেলে লিটারে ৩ রুপি শুল্ক বাড়িয়েছে মোদি সরকার। এর মধ্যে বিশেষ উৎপাদন শুল্ক ২ রুপি ও সড়ক পরিকাঠামো বাবদ ১ রুপি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্লুমবার্গ কুইন্ট ও আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাড়তি এই কর না বসালে গতকাল থেকে ভারতের বাজারে জ্বালানির দাম লিটারে প্রায় ৩ টাকা কমে যেত।
অবশ্য ভারত সরকার আশা করছে, নতুন এই শুল্ক বাবদ আগামী অর্থবছরে বাড়তি ৩৯ হাজার কোটি রুপি আয় হবে।
গত শুক্রবার কলকাতায় পেট্রলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৭২ দশমিক ৭০ রুপি। ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ রুপি। গতকাল ৩ রুপি বাড়তি শুল্ক বাড়ানোয় এখন পেট্রলের দাম হয়েছে ৭২ দশমিক ৫৭ রুপি। ডিজেলের দাম হয়েছে ৬৪ দশমিক ৯১ রুপি। অর্থাৎ, গতকাল ৩ রুপি দাম কমার কথা থাকলেও না হয়নি। পেট্রলে মাত্র ১৩ পয়সা দাম কমেছে, ডিজেলে ১৬ পয়সা।
দিল্লির বাজারেও অনেকটা একই চিত্র। সেখানে পেট্রলের দাম ছিল ৬৯ দশমিক ৮৭ রুপি, ডিজেলের ৬২ দশমিক ৫৮ রুপি।
পেট্রলের ওপর বিশেষ অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক প্রতি লিটারে ২ থেকে ১০ রুপি বাড়ানো হয়েছে। ডিজেলের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে প্রতি লিটারে ৪ টাকা করা হয়েছে।
তবে দেশটির অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, বাড়তি কর চাপলেও তেলের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। আজ রোববারও গতকালের তুলনায় পেট্রল ১২ পয়সা, ডিজেল ১৪ পয়সা কমছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, এমনিতেই গতি নেই অর্থনীতির, তার ওপর করোনাভাইরাসের জেরে ব্যবসা নিয়ে অনিশ্চয়তা। এর মধ্যে পেট্রল-ডিজেলের দাম না কমানোয় সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী মহল পর্যন্ত বিপাকে পড়বে।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন বলেছেন, এটা জনবিরোধী নীতি। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম যেভাবে কমেছে, তাতে পেট্রল-ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো উচিত।
কংগ্রেসের দাবি, পেট্রল-ডিজেলকেও জিএসটির (পণ্য ও সেবা কর) আওতায় আনা হোক। সেই সিদ্ধান্ত হওয়া পর্যন্ত এখন পর্যন্ত আরোপ করা সব শুল্ক প্রত্যাহার করা হোক।
সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, সরকার বড়লোক, শিল্পপতিদের ঋণ মউকুফ করে দিচ্ছে। দেশের বাকি মানুষের জন্য শুল্ক চাপাচ্ছে।
মোদি সরকারের আমলে ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে পেট্রল-ডিজেলে শুল্ক বেড়েছে নয়বার। এই নয় দফায় পেট্রলে মোট ১১ দশমিক ৭৭ রুপি, ডিজেলে ১৩ দশমিক ৪৭ রুপি কর বেড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমলেও পেট্রল-ডিজেলের দাম কমেনি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ২ রুপি, তার পরের বছর দেড় রুপি কমানো হয়। তবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে আবার ২ রুপি বাড়ানো হয়। এবার ৩ রুপি বাড়ানো হলো।
করোনাভাইরাসের কেন্দ্র এখন আর চীন নয়, ইউরোপ। এর প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেট ফুয়েল, গ্যাসোলিন ও ডিজেলের চাহিদা তলানিতে ঠেকেছে। এত সব ধাক্কায় গত বৃহস্পতিবার ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারে নেমে আসে। গতকাল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৩৩ ডলার।