বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই করোনা প্রতিরোধে নেওয়া লকডাউন শিথিল হয়েছে। পরিবহন চালু হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোও চালু। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে তেলের সরবরাহ কিছুটা বাড়াতে চাইছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল উৎপাদনকারীরা। চলতি সপ্তাহেই সরবরাহ বাড়ানোর ঘোষণা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক তার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করতে মঙ্গল ও বুধবার একটি সভা করবে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বড় উত্পাদকেরা দাম বাড়াতে এপ্রিল মাসে সরবরাহ কমাতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা পরিবর্তন করতে সম্মত হবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী মাস থেকে দৈনিক ৭৭ লাখ ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমানো হবে। অর্থাৎ, ২০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
করোনার সংক্রমণের প্রতিরোধে নেওয়া লকডাউনের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় এপ্রিলে ওপেকভুক্ত দেশ ও রাশিয়াকে নিয়ে গঠিত ওপেক প্লাস দৈনিক ৯৭ লাখ ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমাতে সম্মত হয়। দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং মজুত কমাতে মে ও জুন মাসে তেলের এই পরিমাণ উৎপাদন কমাতে রাজি হয় এ জোট। ধীরে ধীরে এই পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন কমানো হবে ৮০ লাখ ব্যারেল। পরে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কমানো হবে দৈনিক ৬০ লাখ ব্যারেল।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেড ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) এপ্রিলের একপর্যায়ে শূন্যের নিচে নেমে যায়। সে সময় এই তেলের দাম হয় মাইনাস ৩৭.৬৩ ডলার। এর মানে হলো, তখন ক্রেতাকে প্রতি ব্যারেল তেলের সঙ্গে এই পরিমাণ অর্থও দিতে রাজি ছিলেন উৎপাদকেরা। চাহিদা না থাকা ও উৎপাদন অব্যাহত থাকায় মে মাসেই তেল মজুতের আর জায়গা থাকবে না বলে আশঙ্কার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) বলে, করোনভাইরাস প্রতিরোধে নেওয়া লকডাউনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব কেটে গেছে। আইইএ তাদের মাসিক প্রতিবেদনে এ বছর অপরিশোধিত তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় কিছুটা উন্নতির পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে এও সতর্ক করা হয়েছে, এই মহামারি কোন দিকে যাবে তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের কয়েকটি অংশে ভাইরাসের আবার ঢেউ ওঠায় ‘একটি ছায়া ফেলছে’। এটি চাহিদা বৃদ্ধির পথে কিছুটা হুমকিস্বরূপ। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং আংশিক লকডাউনের প্রবর্তন এই অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।
গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) জানায় কোভিড-১৯-এ বৈশ্বিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্লোরিডায় এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ।