বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের মূল্য প্রথমবারের মতো ৬০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল শনিবার বিটকয়েনের দাম হয়েছে ৬১ হাজার ১১৯ ডলার। ২৪ ঘণ্টায় দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ভার্চ্যুয়াল এই মুদ্রাবাজারের সর্বমোট মূল্য এখন ১ দশমিক ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। (১ ট্রিলিয়ন = ১ লাখ কোটি)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করোনা প্যাকেজ পাসের কারণেই এই রেকর্ড উত্থান বিটকয়েনের। গত বুধবার ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের ওই বিল কংগ্রেসে পাস হয়।
চলতি বছর তরতর করে বাড়ছে বিটকয়নের দাম। গত বছরের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত এই ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ভার্চ্যুয়াল এই মুদ্রাবাজারের সর্বমোট মূল্য আবার ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়ায়। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা এটাও বলছেন, অর্থ প্রদানের মাধ্যম হিসেবে বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে এর পেছনে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। মাস্টারকার্ডও নির্দিষ্ট ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্থ প্রদানের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করারও পরিকল্পনা করছে। বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক ব্ল্যাকরকও ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহারের উপায় খুঁজছে। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এ ছাড়া কোভিড-১৯ মহামারিও বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রেখেছে, কারণ ব্যাপকভাবে অনলাইন কেনাকাটা ও অনলাইনে অর্থ প্রদানের দিকে ঝুঁকছে মানুষ।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিউজ সাইট কয়েনডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, বিটকয়েন এ বছর ২৮ হাজার ৯০০ ডলারে শুরু করেছিল। জানুয়ারির শুরুতে দাম ৪০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। পরে আবার কমে ৩০ হাজারে নামে। পরে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার বিনিয়োগের পর আবারও দাম বাড়তে থাকে দাম। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে বিটকয়েন। ২১ ফেব্রুয়ারি ৫৮ হাজার ডলারে পৌঁছায়। এবার ৬০ হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করল বিটকয়েন। গত এক বছরে বিটকয়েনের দাম বেড়েছে ৫৭০ শতাংশের বেশি।
টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ককে ডিজিটাল মুদ্রার একজন অন্যতম প্রবক্তা বলা হয়।
তবে সমালোচকেরা মনে করেন, বিটকয়েন অর্থ হিসেবে কম এবং এটি একধরনের অনুমানমূলক ট্রেডিং সরঞ্জাম, যা দিয়ে বাজারে কারচুপি করা সহজ।
২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার প্রচলন করে। এ ধরনের মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে পরিচিতি পায়। নাকামোতোর উদ্ভাবিত সে ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হয় বিটকয়েন। বিটকয়েন লেনদেনে কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে সরাসরি (পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান-প্রদান হয়। লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের পদ্ধতি।
প্রচলিত পদ্ধতিতে ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েনের প্রচলন সম্ভব। অর্থাৎ সরবরাহ সীমিত। সে জন্যই বিটকয়েনকে স্বর্ণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। খনি থেকে উত্তোলনের একপর্যায়ে গিয়ে যেমন স্বর্ণের সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে। এরপর উত্তোলিত স্বর্ণের বিকিকিনি হতে পারে। তবে নতুন করে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। বিটকয়েনের ধারণাও তা-ই।
অ্যালগরিদমের সমাধানের মাধ্যমে বিটকয়েন ‘উত্তোলন’ করতে হয়, যা বিটকয়েন মাইনিং হিসেবে পরিচিত। আর বর্তমান হারে চলতে থাকলে ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েন মাইনিং করতে ২১৪০ সাল লেগে যাবে।