নানা জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ টিকা নিতে প্রস্তুত নন। কিন্তু নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এই মানুষদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে টিকা নিতে রাজি করানো যাবে।
দারিদ্র্য বিমোচনে কী পদ্ধতি কাজে আসে, তা বুঝতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন অভিজিৎ এবং তাঁর সঙ্গে নোবেল পুরস্কার পাওয়া এস্থার দুফলো ও মাইকেল ক্রেমার। মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এবার টিকাদান কর্মসূচিতে তাঁর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
নিজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আরও নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কোভিডের টিকার ব্যাপারে এখন যে মানুষের মধ্যে কিঞ্চিৎ অনাগ্রহ বিরাজ করছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি মনে করেন না, টিকার বিরুদ্ধে মানুষের মনে যে শঙ্কা, তার সঙ্গে বিশেষ কোনো মতাদর্শের সম্পর্ক আছে।
বন্ধু বা সুহৃদদের দেখে একই কাজ করতে উৎসাহিত বোধ করা, এই ব্যাপার অনেক সমীক্ষাতেই দেখা গেছে বলে জানান অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন কৃষিপ্রযুক্তি থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ ব্যবহার—সব ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি কাজ করে।
বিজনেস ইনসাইডারকে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পুরো জিনিসটাই নতুন, এটার যেমন অঙ্গীকার আছে, তেমনি এ নিয়ে ভয়ও আছে।’ তবে এই মুহূর্তে টিকা নিয়ে কিছু ভীতি থাকা অসংগত নয় বলে তিনি মনে করেন। এই পরিস্থিতিতে টিকা নিয়ে মানুষের ভীতি দূর করতে দুই ধরনের কৌশলের কথা বলেছেন তিনি।
প্রথমত, প্রযুক্তির যুগে কিছু মানুষ নতুন প্রযুক্তি আগেভাগে ব্যবহার করেন, অন্যরা তখন অপেক্ষায় থাকেন, এটি প্রকৃত অর্থে কেমন। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, একদল মানুষ কোনো না কোনো কারণে ইতিমধ্যে অরক্ষিত। আবার কিছু কিছু মানুষ টিকা নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী, তাঁরাই প্রথমে টিকা নেবেন। তিনি বলেন, যখন অন্যরা দেখবেন, তাঁদের বন্ধু বা পরিচিত মানুষ টিকা নিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন, তখন অন্যরা এঁদের ঈর্ষা করবেন।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, অন্যকে দেখে একই কাজ করতে উৎসাহিত বোধ করা শুধু বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই হয় না, জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও হয়। আর এই চাপ বোধ করা খুব খারাপ কিছু নয়। বন্ধু বা সুহৃদদের দেখে একই কাজ করতে উৎসাহিত বোধ করা, এই ব্যাপার অনেক সমীক্ষাতেই দেখা গেছে বলে জানান তিনি। নতুন কৃষিপ্রযুক্তি থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ ব্যবহার—সব ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি কাজ করে।
যখন অন্যরা দেখবেন, তাঁদের বন্ধু বা পরিচিত মানুষ টিকা নিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন, তখন অন্যরা এঁদের ঈর্ষা করবেন।অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও মনে করেন, টিকার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত মানুষেরা যখন দেখবেন, তাঁদের পরিচিত মানুষেরা ফাইজার ও মডার্নার টিকা নিয়ে ভালোই আছেন, তখন তাঁরা স্বস্তি বোধ করবেন। এমনকি নিজেরা টিকা নিতেও উৎসাহিত হবেন।
এ ছাড়া ভারতের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মানুষের মুখে মুখে যখন টিকার কার্যকারিতার কথা প্রচারিত হয়, তখন অন্যরা টিকা নিতে উৎসাহিত হন। তিনি বলেন, পাড়া-মহল্লার গল্পবাজ মানুষ নিজের গরজেই নতুন পণ্য বা কর্মসূচির কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা করে থাকেন। তাঁরা বলে বেড়ান, ‘আপনারা দেখুন, এটা ভালো জিনিস।’
মানুষের টিকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সাধারণত মতাদর্শ বা গোঁড়ামি থেকে আসে না বলেই মনে করেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। টিকা আসেনি বলেই মানুষ এখনো টিকা নিয়ে দ্বিধান্বিত বলে মনে করেন তিনি।