যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা চীনের ই–কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার সাবেক কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। চীনের উত্তর-পূর্ব শানডং প্রদেশের ওই জেলা আদালত বলেছেন, ওয়াং নামের ওই ব্যক্তি তাঁর নারী সহকর্মীর সঙ্গে ‘জোরপূর্বক যে অশ্লীলতা’ করেছিলেন, তা অপরাধ ছিল না। গত মাসে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত মাসে আলিবাবার এক নারী কর্মী অভিযোগ করেন, ‘তিনি একটি ব্যবসায়িক ভ্রমণে জিনান শহরে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’ তাঁর ওই অভিযোগ চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়।
জিনান শহরের পুলিশ জানায়, তদন্ত বন্ধ করা হয়েছে। তবে ওয়াং ‘শাস্তি হিসেবে’ ১৫ দিনের জন্য আটক থাকবেন। ওয়াংকে গ্রেপ্তারাদেশ দেওয়া হয়নি।
মামলা প্রত্যাহারের খবরের প্রতিক্রিয়ায় আলিবাবার এক মুখপাত্র বিবিসি অনলাইনকে বলেন, যৌন অসদাচরণের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে আলিবাবা গ্রুপের। সব কর্মচারীর জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা আলিবাবার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
গত মাসে আলিবাবার ওই নারী কর্মীর পোস্ট ভাইরাল হয়। এর পরপরই করপোরেট জগতে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রথমে ব্যবস্থা না নিলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাপের মুখে পড়ে আলিবাবা অভিযুক্ত ব্যবস্থাপককে চাকরিচ্যুত করে। সেই সঙ্গে আরও দুই জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পদত্যাগ করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১১ পৃষ্ঠার একটি নথি প্রকাশ করেন ওই নারীকর্মী। যেখানে তিনি বলেন, ‘তাঁর ব্যবস্থাপক তাঁকে একটি হোটেলের রুমে ধর্ষণ করেছিলেন। তাঁকে এর আগে জোরপূর্বক মদ্যপান করতে বাধ্য করা হয়।’ তাঁর ওই বক্তব্য টুইটারের মতো চীনের প্ল্যাটফর্ম উইবোতেও নিন্দার ঝড় তোলে। ওই নারী বলেন, ‘ব্যবস্থাপক তাঁকে ক্লায়েন্টের সঙ্গে বৈঠকের জন্য জিনান শহরে যেতে বাধ্য করেন, যা আলিবাবার হেড অফিস থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এরপর ব্যবস্থাপক তাঁকে রাতের খাবারের সময় মদ পান করার আদেশ দেন।’
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সরাসরি সুপারভাইজার ও মানবসম্পদ বিভাগে অভিযোগ করার দুই সপ্তাহ পরও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ফোরামে সুদীর্ঘ পোস্ট লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
আলিবাবা পরে মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানকে তিরস্কার করেছে এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ জানতে একটি হটলাইন চালু করেছে। পাশাপাশি, ভবিষ্যৎ বিরোধ নিষ্পত্তিতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে ১০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। তবে তদন্তে কী পাওয়া গেছে, তা কখনোই প্রকাশ করা হয়নি।