বছর শেষ হতে আর বেশি বাকি নেই। নভেম্বরের তো চার ভাগের তিন ভাগ শেষ। হাতে রয়েছে আর ডিসেম্বর। তারপরই নতুন বছর ২০২১। যারা মহামারির এই সময়ে ২০ সালটা পার করতে পারবে, তারা হয়তো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবে। তবে মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে সব জরা এমনটা আশা করা হয়তো বেশি হয়ে যাবে। এবারের ২১ নম্বরটার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে ভাগ্য, ঝুঁকি, পাশার দান ঘুরিয়ে সুযোগ গ্রহণের তরিকা। আমরা আশা করছি, করোনা মহামারি থেকে হয়তো উত্তরণ পাব ২১ সালে। হয়তো একটি কার্যকর টিকারও উদ্ভাবন হবে। তবে ইতিমধ্যেই আগামী বছরের জন্য স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সামনের বছর কেমন হবে তেমন ১০টি অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে দ্য ইকোনমিস্ট।
প্রথমেই শুরু হবে টিকা সহজলভ্যতা, এরপর এটি বিতরণের চ্যালেঞ্জ। টিকা দেশগুলোর মধ্যে একটি লড়াইয়ের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যে কে কখন পাবে এ সবকিছু নিয়ে একটি দ্বন্দ্বের ঝুঁকি তৈরি করছে। অনেক বিশ্লেষণেই বলা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা কার্যকর টিকা উদ্ভাবনে সফল হলে এবং তার সফল উৎপাদন সম্ভব হলেও তা বিশ্বের সব মানুষকে সরবরাহের জন্য যথেষ্ট হবে না। সারা বিশ্বে এই সফল টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নজিরবিহীন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারপরও উদ্বেগের জায়গা হলো—করোনার ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোর প্রয়োজনকে আমলে না নিয়েই হয়তো এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে ধনী দেশগুলো।
টিকা হাতে পাওয়ার পর অর্থনীতিগুলোর জন্য মহামারি থেকে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুনরুদ্ধার বেশ জটিল হয়ে উঠবে। সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রাদুর্ভাব দেখা যেতে পারে। ফলে শক্তিশালী এবং দুর্বল সংস্থাগুলোর মধ্যে ব্যবধান আরও প্রশস্ত হবে।
হোয়াইট হাউসে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিধ্বস্ত নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক অবস্থা কতটা মেটাতে সক্ষম হবেন, তা এখন চ্যালেঞ্জ। হয়তো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং ইরান পারমাণবিক চুক্তির আবার সূচনা হবে। করোনা ছাড়াও বিশ্বের সামনে নতুন নতুন বিষয় আসবে।
বাইডেন প্রশাসন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধ করবে, এতটা আশা করা ঠিক হবে না। বরং জো বাইডেন এই লড়াই আরও কার্যকরভাবে করার জন্য মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক সংশোধন করবেন। অন্যদিকে আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এই উত্তেজনা এড়ানোর পক্ষে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব কিছু কোম্পানি ঘিরে রয়েছে। তবে কেবল হুয়াওয়ে এবং টিকটকের জন্য নয়, আগামী বছর ব্যবসা ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক জটিলতা আরও বাড়তে পারে। ওপরের চাপের পাশাপাশি, প্রধান নির্বাহীরা নিচ থেকেও চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন। কারণ কর্মী ও গ্রাহকেরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে সরকারগুলো এ বিষয়ে খুব কমই কাজ করেছেন। ০
২০২০ সালে মহামারিতে ব্যাপক হারে বেড়েছে অনলাইন ব্যবহার। দূরে বসে ভিডিও কনফারেন্স এবং অনলাইন শপিংয়ের মতো অনেক প্রযুক্তিগত আচরণ গ্রহণ ত্বরান্বিত করেছে এই মহামারি। ২০২১ সালে এই পরিবর্তনে আটকে থাকতে পারে বিশ্ব নাকি আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
করোনার কারণে ইতিমধ্যে পর্যটন সংকুচিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ওপর আরও জোর দিয়ে পর্যটনের রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। টিকে থাকতে বিমান সংস্থা, হোটেল চেইন এবং বিমান প্রস্তুতকারীরা লড়াই করছে। তেমনি টিকে থাকতে লড়াই করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সাংস্কৃতিক বিনিময় পূর্বের অবস্থায় আসবে, এমনটা আর মনে করা হচ্ছে না।
এই সংকটের একটি মাত্র ভালো দিক হলো বিভিন্ন সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে। চাকরি তৈরি করতে এবং দূষণ কমাতে সরকারগুলো সবুজ পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
ডেজা ভু কী? ফরাসি ভাষায় ডেজা-ভু কথার অর্থ ‘আগেই দেখা বা পূর্বপরিচিত’। ২০ সালে আমরা দেখেছি নানা ধরনের ইভেন্ট বন্ধ হতে। সে খেলাধুলা হোক, অর্থনৈতিক সমাবেশ বা চলচ্চিত্র উৎসব। এমনটায় হয়তো আবার দেখব ২১ সালে। এমন সবকিছুই হতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, ২১ সালে নতুন ঝুঁকি তৈরির একটি ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। নীতিনির্ধারকদের এখনকার উপেক্ষিত ঝুঁকি যেমন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এবং পারমাণবিক সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারেন।