গত বৃহস্পতিবার শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও লেখক আকবর আলি খান। তাঁর কাজের মূল্যায়ন করেছেন দুই অর্থনীতিবিদ।
আকবর আলি খান একজন প্রগতিশীল চিন্তক, নীতিতাড়িত ব্যক্তি ও আলোকিত মানুষ ছিলেন। তবে নিঃসন্দেহে তাঁর প্রথম পরিচয়, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের নীতি-আদর্শ তাঁর পেশাগত জীবনে প্রতিভাত হয়েছে। ধরাবাঁধা আমলাতন্ত্রে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি নিজ জীবনে পরার্থপরতার দর্শন প্রতিফলিত করেছেন। ১৯৯০-এর দশকে তাঁর কাজ কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার।
ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তিনি। ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজ গঠনের পাশাপাশি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার চিন্তা করতেন তিনি। ছিলেন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ।
মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি তিনি একজন উন্নয়নযোদ্ধাও ছিলেন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা সৃজনশীলভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করেছেন তিনি। জনমুখীন নীতি ও জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান গড়ার কথা বলেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি বাজারব্যবস্থার সঙ্গে রাষ্ট্রের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষপাতী ছিলেন। চেষ্টা করেছেন বৈশ্বিক পরিসরে ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপনের। একই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা প্রয়োজন, সে কথাও জোর দিয়ে বলতেন তিনি।
এখন রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব নীতি অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে গৃহীত হতে দেখি, সেগুলো প্রবর্তন ও এর পক্ষে ঐকমত্য সৃষ্টির পেছনে আকবর আলি খানের ভূমিকা ছিল।
আকবর আলি খান গণতান্ত্রিক জবাবদিহিকে উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করতে কখনো পিছপা হননি। বরং এ বিষয়ে তিনি সব সময়ই সোচ্চার ছিলেন।
আকবর আলি খানসহ মোট চারজন উপদেষ্টা ১/১১-এর আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এটি যে তদানীন্তন জটিল উত্তরণপ্রক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল, তা যথেষ্ট পরিমাণে মূল্যায়িত হয় না।
পরিশেষে বলব, আকবর আলি খান নাগরিক সমাজের উজ্জ্বল প্রতিনিধি ছিলেন। নিজের নীতিগত অবস্থানকে পরিষ্কার করতে চাকরি-উত্তর জীবনে কখনোই দ্বিধা করেননি তিনি।
সে জন্য বলা দরকার, তাঁর অভাব আমাদের জাতীয় জীবনে বড়ভাবে অনুভূত হবে।