দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিলাইমারীতে বি–ব্রাদার্স অ্যাগ্রো খামারে লেয়ার মুরগি আছে ৯ হাজার। দুই মাস আগেও এ খামারে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ছিল ৯ টাকা। আবহাওয়ার তারতম্যে বর্তমানে এ খামারে ডিমের উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে গেছে। তাতে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৮০ পয়সা।
এই খামারমালিকেরা জানান, দুই মাস যখন উৎপাদন খরচ ৯ টাকা ছিল, তখন প্রতিটি ডিম তাঁদের বিক্রি করতে হয় সর্বোচ্চ ৮ টাকা ৭৫ পয়সায়। তখন প্রতিটি ডিমে ২৫ পয়সার কম-বেশি লোকসান গুনতে হয়। গতকাল প্রতিটি ডিম এ খামার থেকে বিক্রি করা হয় ১১ টাকা ২৫ পয়সা। তাতে প্রতিটি ডিমে লাভ ১ টাকা ৪৫ পয়সা।
বিলাইমারীতে চার ভাই মিলে গড়ে তুলেছেন বি-ব্রাদার্স অ্যাগ্রো খামার। চার ভাইয়ের একজন মাসুদ রানা বলেন, ‘দিনাজপুরে ডিমের দাম নির্ধারণ করে নর্থ এগ ও কাজী ফার্ম মিলে। প্রতিদিন যে দাম তারা নির্ধারণ করে সেই দামের চেয়ে ১৫ পয়সা কমে আমাদের আড়তে ডিম বিক্রি করতে হয়। দুই-তিন মাস আগেও ডিম বিক্রি করে লোকসান গুনেছি। বর্তমানে প্রতিটি ডিমে ১ টাকা ৪৫ পয়সা লাভ হচ্ছে। খামারি পর্যায়ে ডিমের দাম যতটুকু বেড়েছে, সেটা স্বাভাবিক।
ডিমের দাম নির্ধারণের বিষয়ে নর্থ এগ লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা রেজওয়ানুর রশিদ বলেন, ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয় ঢাকা তেজগাঁও থেকে। ঢাকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে একই দাম নির্ধারণ করে থাকি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়টিকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়।
দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারে গতকাল শনিবার পাইকারিতে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয় ৪৮ টাকায়। অর্থাৎ একটি ডিমের দাম ১২ টাকা। খুচরা পর্যায়ে সেই ডিম বিক্রি হয় ৫২ টাকা হালিতে। হঠাৎ করে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ক্রেতারা। গতকাল শহরের রানীগঞ্জ মোড় এলাকার বাসিন্দা বাবুল আক্তার (৪৫) প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস আগেও ডিমের হালি ছিল ৪০ টাকার মতো। এখন সেই দাম ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। দেশে এত এত খামার ও উৎপাদনের পরও ডিমের দাম এভাবে বাড়ল কেন, তা মাথায় আসছে না।
মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা আফাজউদ্দিন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। তাই ডিমই ছিল ভরসা। এখন সেটির দামও বাড়তি। তাহলে আমরা খাব কী?’
দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় লেয়ার খামার আছে ৩৪১টি। এসব খামারে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার পর্যন্ত মুরগি রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘জেলায় ডিমের বার্ষিক চাহিদা প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি। সেখানে বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৫৪ কোটি। উদ্বৃত্ত ডিম জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে যায়।
সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার আলী পোলট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মোস্তাহিদ আলী বলেন, গরমের কারণে ডিমের উৎপাদন কমেছে। কারণ, গরমে মুরগি মরে যায়। পোলট্রিশিল্পের জন্য সরকারি কোনো নীতিমালা নেই। যখন–তখন ভারতীয় ডিম, বাচ্চা ও ওষুধ এ দেশের বাজারে আসছে। আবার বড় বড় করপোরেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোলট্রিশিল্পগুলো। তাই দিনাজপুরে প্রায় ৪০ শতাংশ খামার এরই মধ্যে বন্ধের পথে।
দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন আশিকা আকবর বলেন, ডিম উৎপাদন কিছুটা কমেছে, তা ঠিক। তবে শুধু সেই কারণেই ডিমের দাম বেড়েছে, এমনটি বলা যাবে না।