আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তগুলো অনেকে নতুন মনে করছেন। কিন্তু আসলে তা নয়। রাজস্ব খাতের সংস্কারে আগে আমরা যে কাজ করতে পারিনি, সেই কাজগুলো আইএমএফ আবারও মনে করিয়ে দিল। অনেক আগেই এসব সংস্কার করা উচিত ছিল। কারণ, অর্থনীতিতে সম্ভাবনা আছে। আমরাও চাই সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো হোক।
আমরা যদি সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়ন চাই, তাহলে আইএমএফের ঋণের কারণে এসব শর্ত পূরণ করতেই হবে। কারণ, শর্ত পূরণ হলো কি না, তা পর্যালোচনা করা হবে।
অতীতে আইএমএফের কাছ থেকে একাধিকবার ঋণ নেওয়া হয়েছে। তখনো নানা শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। একবার ৭৫টি শর্ত দিয়েছিল, পরে দেখা গেল ৩৫–৪০টি শর্ত পূরণ করা হয়েছে। এর বেশি আমরা পারিনি। তখন ব্যর্থ হয়েছি।
সর্বশেষ বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) নেওয়ার সময় নতুন ভ্যাট আইন চালুর শর্ত দিয়েছিল। ২০১২ সালে আইএমএফ বলেছিল, ওই বছর নতুন ভ্যাট আইন পাস না করা হলে কিস্তি আটকে দেবে। পরে সরকার তাড়াহুড়া করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ভ্যাট আইন পাস করেছিল। কিন্তু পরে ২০১৯ সালে যখন আইনটি চালু করা হয়, তখন দেখা গেল, যেভাবে আইনটি পাস হয়েছিল, সেভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাধা আসায় আইনটি পরিবর্তন করতে হয়েছে।
আইএমএফ কর–জিডিপি অনুপাত এক বছরেই দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে বলেছে। এটা শুধু মুখে বললেই হবে না। এ জন্য করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে, করহারও বাড়াতে হতে পারে। আবার এত পরিমাণ শুল্ক–কর ছাড় দিয়ে কর–জিডিপি অনুপাত বাড়ানো কঠিন। শুল্ক–কর ছাড় কমাতে গেলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাধা আসবে। আবার সরকারের বড় বড় প্রকল্পে কর ছাড় বন্ধ করতে হবে। তারপরও আইএমএফের শর্ত মানতে হলে এত কর ছাড়ের লাগাম টানতেই হবে। তা না হরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আশা করা যায় না।
ভর্তুকি কমানো আরও বেশি কঠিন। কারণ, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে হলে দাম বাড়াতে হবে, যা জনগণের ওপর চাপ তৈরি করবে। আবার না বাড়ালে সরকারের খরচ বাড়বে। তখন রাজস্ব আদায়ে বাড়তি চাপ থাকবে। ভর্তুকি কমানোর বিষয়টি রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সার্বিকভাবে আইএমএফের শর্ত মেনেই রাজস্ব খাতের সংস্কার করতে হবে।