চাল নিয়ে আতঙ্ক, মজুত করছেন অনেক অনিবাসী ভারতীয়

চাল
ফাইল ছবি

বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ২০ জুলাই বাসমতী ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। হঠাৎ ভারতের এমন পদক্ষেপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাজারে পরবর্তী সময় চাল কিনতে পাওয়া যাবে না—এমন আশঙ্কায় চাল কিনে মজুত করছেন গ্রাহকেরা।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, গত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, গ্রাহকেরা বাজারের ব্যাগ নিয়ে মুদিদোকানের বাইরে দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করছেন। সেখান থেকে যে যতটা পারছেন, চাল কিনে নিচ্ছেন।

এই চিত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত দেখা গেছে। মূলত বিদেশি ভারতীয়রা, যাঁরা প্রধান খাদ্য হিসেবে চাল খান, বেশি ভিড় করছেন দোকানগুলোয়। চালের দোকানের উপচে পড়া ভিড় নিয়ে বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কিছু দোকান চাল কেনার ওপর সীমা আরোপ করেছে। আবার অন্য অনেক দোকানদার এই উন্মাদনাকে পুঁজি করে বেশি মুনাফার আশায় চালের দাম বাড়িয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ গ্রাহকেরা বেশি পরিমাণে চাল কেনায় বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলো চালের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগে পড়েছে।

ভারত সরকার বলেছে, বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবার গত এক মাসে দেশের অভ্যন্তরে খুচরা বাজারে চালের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটেই চাল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ভারতের সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের কারণে বৈশ্বিক খাদ্যবাজারে চাপ বাড়ছে। কারণ, ইতিমধ্যে বৈরী আবহাওয়া ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এশিয়া ও আফ্রিকার কোটি কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল থেকে তৈরি ভাত।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের সারি হিলসে অবস্থিত একটি ভারতীয় মুদিদোকান এমজিএম স্পাইসেস। দোকানটি এখন গ্রাহকদের সর্বোচ্চ পাঁচ কেজির চালের প্যাকেট কেনার অনুমতি দিচ্ছে। দোকানটির ব্যবস্থাপক শিশির শাইমা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ চাল কিনতে শুরু করেছে। তাই আমাদের বিক্রির পরিমাণ সীমাবদ্ধ করতে হয়েছিল। এরপরও একাধিক ব্যাগ কিনতে না দেওয়ায় কিছু লোক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু আমরা কাউকে বেশি পরিমাণে কিনতে দিচ্ছি না।’

যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, লোকেরা চাল কেনার জন্য উন্মাদনায় জড়িয়ে পড়েছেন। তবে ব্লুমবার্গ এসব ভিডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। আর সিটিনিউজ জানিয়েছে, কানাডার টরন্টোর কিছু দক্ষিণ এশীয় মুদিদোকান চাল ক্রয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ও খুচরা দাম বাড়িয়েছে।

মালয়েশিয়ায় ভারতীয় রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি গোবিন্দস্বামী জয়াবালন জানান, ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর যেভাবে দোকানগুলো থেকে চালের মজুত শেষ হচ্ছে, তাতে তাঁর উদ্বেগ বাড়ছে। এ কারণে বাজারে চালের ঘাটতি হতে পারে। তাতে থোসাই ও ভার্মিসেলির মতো চাল দিয়ে বানানো বিভিন্ন খাবারের খরচ বেড়ে যাবে।

গোবিন্দস্বামী জয়াবালন আরও বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে খুবই চিন্তিত। আমাদের রেস্তোরাঁর বেশির ভাগ গ্রাহক নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর। তাই আমরা খাবারের দাম বাড়াতে চাই না। তবে বর্তমান অবস্থা আমাদের একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।’