‘চিপ–৪’ জোটে যোগ দিতে আগ্রহী তাইওয়ান

যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত চিপ উৎপাদনকারী জোট চিপ-৪ গ্রুপে সক্রিয় হতে রাজি হয়েছে তাইওয়ান। নিজ দেশের কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা ও চিপের সরবরাহ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে তাইওয়ান। গত সপ্তাহে তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তাইওয়ানের উপ অর্থমন্ত্রী চেন চের-চি। খবর আল–জাজিরার।

যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান– এই চারটি দেশ বিশ্বের বেশিরভাগ সেমিকনডাক্টর চিপ তৈরি করে। মুঠোফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক গাড়িসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরিতে প্রয়োজন হয় এই চিপের। করোনার সময় বৈশ্বিকভাবে চিপের উৎপাদন কমে যায়। ঘাটতি তৈরি হলে চাপে পরে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ আমদানিনির্ভর বৃহৎ দেশগুলো। অন্যদিকে চিপ সংকটের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগী হয় পৃথিবীর প্রায় সব দেশ।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশগুলোকে নিয়ে একটি জোট গড়তে উদ্যোগী হন, যার উদ্দেশ্য আমদানিনির্ভরতা কমানো ও চীনের প্রভাব খর্ব করা। এ সংক্রান্ত নতুন একটি আইনে স্বাক্ষর করে কয়েকশ কোটি ডলার প্রণোদনার ঘোষণা দেন বাইডেন। পাশাপাশি চিপ উৎপাদক বৃহৎ অপর তিন দেশ– তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে নিয়ে চিপ–৪ গ্রুপ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। যদিও এই উদ্যোগ এখনো আলোচনার পর্যায়েই আছে।

চিপ–৪ গ্রুপের লক্ষ্য হল অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর নকশা ও উৎপাদনে  নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি এই খাতে নিজেদের যৌথ প্রভাববলয় তৈরি করা। তাই যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে চীনের মোকাবেলায় এই তিন দেশকে একত্রিত হতে রাজি করাতে। এ লক্ষ্যেই গত সপ্তাহে তিন দেশকে নিয়ে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে সবার আগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে তাইওয়ান। আর জাপানও দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন বলয়েই আছে।

তাইওয়ানের উপ অর্থমন্ত্রী চেন চের-চি বুধবার বলেছেন, চিপ উৎপাদন খাতে একটি অত্যন্ত স্থিতিশীল সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমাদের কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন চিপ–৪ গ্রুপে কাজ করবো। তবে প্রাথমিক আলাপ হলেও গ্রুপটি ঘোষণার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলাপ এখনও শুরু হয়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে পৃথক এক বার্তায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, সহযোগী দেশগুলোতে সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ নিশ্চিত করতে তার দেশ কাজ করবে। এর বিপরীতে চীন থেকে তীব্র হুমকির মধ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে আরেক বড় চিপ উৎপাদক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এখনো কোনো অবস্থান জানায়নি। এর অবশ্য কারণও আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় উৎপাদিত সেমিকন্ডাক্টর চিপের সবচেয়ে বড় বাজার হল চীন।

২০২১ সালে দক্ষিণ কোরিয়া মোট ৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের মেমরি চিপ রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই গেছে চীনে। আর চীনের সঙ্গে হংকংয়ের হিসাব যোগ করলে এটি বেড়ে প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছাবে। তাই এই বাজারের বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত চীনের বিরুদ্ধে হয়তো অবস্থান নিতে চাইবে না দক্ষিণ কোরিয়া।