বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক

নীতি সুদ বাড়বে না, তবে ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধি ধীর হওয়ার কারণ খুঁজে দেখার পরামর্শ

সুদের হার আপাতত আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি মনে করে, মূল্যস্ফীতি উঁচু পর্যায়ে থাকলেও মুদ্রানীতি সঠিক পথে রয়েছে, ফলে এখনই নীতি সুদহার আর বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়েছে কেন, ত খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন কমিটির স্বাধীন সদস্যরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩ ডিসেম্বর। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। এ ছাড়া নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) বিদ্যমান সুদহার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং নিচের সীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির (এসডিএফ) হার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে অপরিবর্তিত নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক ওভারনাইট রেপো সুদহার বা নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করে। নীতি সুদহার বাড়ানোর ওই সিদ্ধান্ত ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়। তখন জানানো হয়েছিল, মুদ্রানীতিতে সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য কমে আসার পূর্বাভাস, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা হ্রাস, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, আমন ধানের ভালো উৎপাদন প্রত্যাশা এবং শীতকালীন সবজির ক্রমবর্ধমান সরবরাহের কারণে মূল্যস্ফীতি কমে আসতে পারে বলে মুদ্রানীতি কমিটি মনে করে।

এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছে মুদ্রানীতি কমিটি। বিশেষ করে কিছু প্রথাগত ও ইসলামি ধারার ব্যাংকে নগদ অর্থের ঘাটতি, সুদের হারের গতিপ্রকৃতি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি এবং বিনিময় হার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকে মুদ্রানীতির স্বাধীন সদস্যরা ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। তাঁদের মতে, আমানতের ওপর সুদের হার বেশ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমানতের বৃদ্ধি কেন শ্লথ হয়ে পড়েছে, তা তদন্ত করে এই ধারা বিপরীতমুখীর জন্য তাঁরা বলেন।

এ ছাড়া বিনিময় হারের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণভাবে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা আধুনিক করা এবং আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ অবশিষ্ট থাকলে তা তুলে নেওয়ার জন্যও স্বাধীন সদস্যরা পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতির সঙ্গে মুদ্রানীতির সমন্বয়ের ওপর মুদ্রানীতি কমিটির স্বাধীন সদস্যরা জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারির পরামর্শ দেন তাঁরা। কারণ এসব ব্যাংকের অনেকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে।