আলিবাবা বাংলাদেশের জন্য যে আলাদা সুবিধা নিয়ে আসছে

আলিবাবা
আলিবাবা

চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা বাংলাদেশের আরও কোম্পানিকে তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পণ্য বিক্রির সুযোগ দিতে চায়। এ জন্য আলিবাবা একটি নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করেছে এবং বাংলাদেশি উৎপাদনকারীরা চাইলে এই ফি পরিশোধের মাধ্যমে ওই প্ল্যাটফর্মে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত নিকেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ বাংলাদেশ থেকে আলিবাবা আরও বেশি ব্যবসা চাইছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে এমন একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আলিবাবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর জোর দিচ্ছে। নিকেই আলিবাবার পেশ করা ওই প্রস্তাব দেখেছে।

বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি আলিবাবার দেওয়া এই সেবা গ্রহণ করলে তা ওয়েবসাইটটিকে জোরদার করবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়া বাংলাদেশ রপ্তানি আয় বাড়াতে আরও একটি পথ খুঁজে পাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সায়েদ আলী বলেন, ‘আলিবাবা বাংলাদেশের এসএমই পণ্যের প্রসারে আমাদের সাহায্য করতে চায় এবং এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে জমা দিয়েছে। আমরা ওই প্রস্তাবের কপি বিভিন্ন চেম্বার ও ব্যবসায়ী সমিতির কাছে পাঠিয়েছি তাদের মতামতের জন্য।’

দুই দশক ধরে পৃথিবীর অন্যতম বড় ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে মাত্র ১৬০টির মতো কোম্পানি তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করছে। পাকিস্তান ও ভারতের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা তিন হাজারের মতো।

আলিবাবা তাদের প্রস্তাবকে ‘বিশেষ প্যাকেজ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন তালিকাভুক্ত সরবরাহকারীদের সংখ্যা যদি ৩০টির বেশি হয়, তাহলে প্রত্যেককে বার্ষিক সদস্য ফি হিসেবে পাঁচ হাজার ডলার দিতে হবে। আর সরবরাহকারীর সংখ্যা ৫০টির বেশি হলে ফি হবে ৪ হাজার ৮০০ ডলার।

তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই ফির পরিমাণকে ‘অত্যন্ত বেশি’ বর্ণনা করেছে আগ্রহী কোম্পানিগুলো। ওই বৈঠকের কাগজপত্র নিকেই এশিয়া দেখেছে, যাতে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ফি কমানোর জন্য দাবি জানিয়েছে।

আলিবাবা প্রস্তাব দিয়েছে যে তাদের ওয়েবসাইটে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশে তৈরি শীর্ষক একটি আলাদা পেজ থাকবে, যাতে দেশটির পণ্য সেখানে প্রদর্শন করা যায়। আলিবাবা বলছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হলে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ‘অপ্রচলতি রপ্তানি বাজারে দ্রুত প্রবেশ করতে পারবে’।

তারা আরও বলেছে, তাদের প্রস্তাব বাংলাদেশকে ‘পোশাক উৎপাদন এবং এর উৎস হিসেবে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, খুচরা বিক্রেতা ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের জন্য বিশ্বে এক নম্বর’ অবস্থান পেতে সাহায্য করবে। আলিবাবার একজন প্রতিনিধি নিকেই এশিয়াকে ই–মেইলে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করার ‘বড় ধরনের সম্ভাবনা’ দেখছেন।

বার্ষিক ফি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া বৈঠকে অনেক এসএমই প্রতিনিধি আলিবাবার প্রস্তাবকে মোটামুটি স্বাগত জানিয়েছেন। প্রায় ২০ জনের মতো প্রতিনিধি ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি মির্জা নূরুল গনি বলেন, ‘আলিবাবা একটি নামজাদা সাইট। তারা যদি বাংলাদেশের পণ্যের জন্য একটি আলাদা পেজ তৈরি করে, তাহলে আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিপুলভাবে উপকৃত হবেন।’

বাংলাদেশে এখন কতগুলো এসএমই আছে সে সম্পর্কে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০১৩ সালের জাতীয় একটি জরিপে এই সংখ্যা ৭৮ লাখ বলে পাওয়া গিয়েছিল। তবে বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এই সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ওই সময়ে আড়াই কোটি মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

বাংলাদেশ চীনের পর সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের এক–পঞ্চমাংশ, আর রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে এই শিল্প থেকে। তবে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পরও দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।

বাংলাদেশে কিছু ছোট কোম্পানি বড় পোশাক উৎপাদনকারীর জন্য চুক্তিতে কাজ করে। অনেকে মনে করেন, আলিবাবার সঙ্গে যোগ দিলে এরা সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারবে।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যেহেতু ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদশের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তাই আমরা যত বেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারব, ততই বাজারে আমাদের প্রবেশের সুযোগ বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, এটা একটা ভালো লক্ষণ যে ‘এমন একটি বড় প্রতিষ্ঠান’ বাংলাদেশে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। এটি বাংলাদেশের ব্যবসার ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলিবাবা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ঠিক কী পরিমাণ ফি নেয়, সেটি পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, ফি, সুবিধা ও শর্তাবলী নিয়ে একটি আন্তসীমান্ত সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।