বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মো. নুরুল ইসলাম আজ বুধবার বিকেলে শপথ গ্রহণ করেছেন। তাঁকে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শপথ বাক্য পাঠ করান।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, সিএজি কার্যালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে শোনা যাচ্ছিল শপথ গ্রহণ হবে আগামী ৩ আগস্টের পরে। তবে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার এক চিঠিতে আজ বুধবার যে শপথ গ্রহণ হবে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ) পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন নুরুল ইসলাম। এ পদে থাকা অবস্থায় ১৩ জুলাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৭(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাঁকে বাংলাদেশের সিএজি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। শপথ গ্রহণের পর তিনি ১৭ জুলাই বিদায় নেওয়া সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
শপথ গ্রহণের পর নতুন সিএজি মো. নুরুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তিনি এই সাংবিধানিক দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করবেন। সিজিএ পদ থেকে কবে পদত্যাগ করলেন, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করতে হয়নি। আইনকানুন অনুসরণ করেই আমি আজ শপথ নিয়েছি।’
নতুন সিএজি নুরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাঁচ বছর বা তাঁর বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার মধ্যে যেটি আগে হবে, সে সময় পর্যন্ত সিএজি পদে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি অষ্টম বিসিএসের কর্মকর্তা। ১৯৮৯ সালে তিনি অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারে নিয়োগ পান। নুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে স্নাতক ও পরের বছর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এখন সিজিএ নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন
মো. নুরুল ইসলাম সিজিএ থেকে সিএজি হয়ে যাওয়ায় সিজিএ পদটি ফাঁকা হলো। সিজিএ হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী ৩ আগস্ট। ৪ ও ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি। সেই হিসাবে ৬ আগস্টের আগে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাবে বলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এগিয়ে আনা হয়েছে।
সিজিএ একটি গ্রেড-১ পদ। সিজিএ হতে গেলে বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের গ্রেড-২ পদে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার নিয়ম রয়েছে। গ্রেড-১ পদের অপেক্ষায় আছেন এসএফসি (আর্মি) মোহাম্মদ গোলাম ছরওয়ার ভুঁঞা, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমির মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ এবং অতিরিক্ত হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. সাইফুর রহমান।
তাঁদের গ্রেড-১ দেওয়ার সুপারিশ করে অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন একবার মার্চে, আরেকবার জুনে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে (এসএসবি) উপস্থাপনের জন্য চিঠি পাঠালেও তা পড়ে রয়েছে। অর্থসচিবের চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় মামলা ও দুর্নীতিবিষয়ক মামলা নেই। পদোন্নতিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নেই।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে এসএসবির বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু অর্থসচিবের সুপারিশকৃত কর্মকর্তাদের গ্রেড-১ দেওয়ার বিষয়টি আর আলোচনায় উঠছে না। যদিও মাঝখানে দুই বছর ফিডার পদে না থাকা সত্ত্বেও এসএসবির বৈঠকে খান মো. ফেরদাউসুর রহমানকে গ্রেড ১ এবং কনিষ্ঠতম ১৫তম বিসিএসের কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলামকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেয় মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন এসএসবিই।
কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ) মনোয়ারা হাবিব এ বছরের ২৩ মার্চ অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) গেছেন। পরে সাবেক ডিসিএজি খান মো. ফেরদাউসুর রহমানও পিআরএলে গেছেন গত ১০ মে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় এসএসবির বৈঠকে বিসিএস অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে থাকছে। যদি অর্থসচিবের প্রস্তাব ও সুপারিশ পাস হয়, সে হিসাবে কালই নিশ্চিত হওয়া যাবে নতুন সিজিএ কে হচ্ছেন।