বছরে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে এক্সিলারেট এনার্জি। এ ব্যাপারে ২০২৬-৪০ সাল মেয়াদে একটি চুক্তি হবে।
বেসরকারি খাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের জন্য এবার মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। সে অনুযায়ী ২০২৬ সাল থেকে ১৫ বছর এলএনজি সরবরাহ করবে কোম্পানিটি। প্রস্তাবিত এই চুক্তির খসড়া গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এলএনজি আমদানির পর তা রূপান্তরের মাধ্যমে গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে এলএনজি রূপান্তরের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। এর একটি এক্সিলারেট এনার্জি ও আরেকটি সামিট গ্রুপ পরিচালনা করে। দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি সরবরাহের জন্য এ দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবই বিবেচনা করছে সরকার। এর আগে গত আগস্টে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এক্সিলারেট এনার্জি বছরে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে। এ জন্য তাদের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি হবে, যার মেয়াদ ২০২৬ থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত। প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম হবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৩৫ ডলার।
এ ছাড়া এক্সিলারেটের ভাসমান টার্মিনালের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে তারা দিনে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রূপান্তর করতে পারবে, যা বর্তমানে ৫০ কোটি ঘনফুট।
দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয় ২০১৮ সালে। এখন পর্যন্ত যত এলএনজি আমদানি হয়েছে, তার পুরোটাই এসেছে সরকারি সংস্থার মাধ্যমে। বর্তমানে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে সরকার। এটির আমদানি বাড়াতে দুটি দেশের সঙ্গে নতুন করে এ বছর আরও দুটি চুক্তি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা এলএনজি সরবরাহ শুরু করবে ২০২৬ সালে। এর বাইরে খোলাবাজার থেকেও নিয়মিত এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ক্রয় কমিটির বৈঠকে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১ ’-এর আওতায় সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো জাহাজ এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ১৭ দশমিক ৫৫ ডলার। তাতে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজির দাম হবে ৭৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তর ১৬৫ কোটি ১ লাখ টাকার ল্যাপটপ কিনবে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে অনুমোদিত হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘হার পাওয়ার’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে কেনা হবে মোট ২৫ হাজার ১২৫টি ল্যাপটপ।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করার জন্য সয়াবিন তেল, কুঁড়ার তেল (রাইস ব্র্যান অয়েল) ও মসুর ডাল কিনছে সরকার। শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস ও সিটি এডিবল অয়েলের কাছ থেকে পণ্য তিনটি কিনতে সরকারের মোট খরচ পড়বে ২৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডাল ১১০ টাকা ৯৭ পয়সা, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৫৬ টাকা ৩৮ পয়সা এবং প্রতি লিটার রাইস ব্র্যান বা কুঁড়ার তেল ১৫৬ টাকা ২৫ পয়সা দরে কেনা হবে।
এদিকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ২০২৪ সালে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই অর্থাৎ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এ তেল আমদানি করা হবে। বাংলাদেশকে বছরে প্রায় ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত, বাকিটা পরিশোধিত।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ‘ভিশন ২০৪১ স্মার্ট টাওয়ার’ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঢাকার কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি কোম্পানি নিয়োগ করা হবে। এ প্রস্তাবও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ‘ডিজিটাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন ইকো-সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় ভবনটি পরিচালনা করবে কাজ পাওয়া কোম্পানি।